নারীদের প্রসব-পরবর্তী ব্যথা

সন্তান জন্মদানের পর মায়েদের নানা শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। এ সময় শরীর দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে এবং প্রায়ই হাড়, মাংসপেশি, অস্থিসন্ধি, স্নায়ু-সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেয়। যথাযথ চিকিৎসা নিলে, সঠিক যত্ন ও কিছু নিয়ম মেনে চললে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

প্রসবের পর ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত সাধারণত যেসব সমস্যা বেশি দেখা যায়, সেগুলো হলো ঘাড়, পিঠ, কোমর বা পায়ে ব্যথা। অস্থিসন্ধিতে (হাঁটু, কবজি) ব্যথা, হাত-পা ও আঙুলে ঝিঁঝি ধরা, অবশ হয়ে যাওয়া, ক্লান্তিবোধ বা অস্বস্তি অনুভব করা, অনেক ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো দীর্ঘমেয়াদি রূপ নিতে পারে।

কারণ

হরমোনজনিত, মেরুদণ্ডের বক্রতার পরিবর্তন, শারীরিক স্থূলতা, নার্ভের ওপর অতিরিক্ত চাপ, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, অপর্যাপ্ত পুষ্টি, মানসিক অশান্তি।

চিকিৎসা

  • রোগনির্ণয়ের জন্য উপসর্গ অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা এবং কখনো কিছু প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। রোগীর কাউন্সেলিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

  • চিকিৎসকের পরামর্শে স্বল্পমাত্রার বেদনানাশক ওষুধ, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন এ ক্যাপসুল, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেটসহ অন্যান্য ওষুধ খাওয়া যাবে।

  • ব্যথার ধরন ও সময় মোতাবেক ব্যথার স্থানে ঠান্ডা বা হালকা গরম পানির সেঁক অথবা হালকা ম্যাসাজ করা যাবে। প্রয়োজনে অন্যান্য সুপারফিশিয়াল ফিজিক্যাল এজেন্ট ব্যবহার করা যাবে।

  • প্রসব-পরবর্তী সময়ে সক্রিয় মায়েদের শারীরিক ও মানসিকভাবে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেওয়া সহজ হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সন্তানের জন্মের পর মৃদু শারীরিক কার্যকলাপ দিয়ে শুরু করুন। নিয়মিত কয়েক মিনিট হাঁটা শুরু করতে পারেন। ধীরে ধীরে সপ্তাহে পাঁচ থেকে সাত দিন দৈনিক ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটতে পারেন।

  • চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে অসুখের ধরন অনুসারে সমস্যাগ্রস্ত স্থানে প্রয়োজনে অর্থোসিস ব্যবহার করা যাবে।

খাবার ও বিশ্রাম

শরীরের ক্ষয়পূরণে প্রসবের পর মাকে যথেষ্ট সুষম খাবার খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি বা তরল খাবার ও ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার খেতে হবে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। শারীরিক ও মানসিক চাপ কমাতে হবে। ভারী কাজ করা নিষেধ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সঠিক দেহভঙ্গি মেনে চলতে হবে।

সতর্কতা

  • যেসব ক্রিয়াকলাপে পেটে প্রচুর স্ট্রেচিং হয়, সেলাইগুলোয় বেশি চাপ পড়ে, তা থেকে বিরত থাকুন।

  • চলাফেরায় তাড়াহুড়া করবেন না।

  • তীব্র মাত্রার শারীরিক অনুশীলন করবেন না।

  • কোনোক্রমেই পেটে ঠান্ডা বা গরম সেঁক অথবা ম্যাসাজ করবেন না।

  • হাই হিল জুতা পরবেন না।

  • দীর্ঘ দূরত্বের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। অসমতল রাস্তা বা অত্যধিক সিঁড়ি ব্যবহার করবেন না।

  • প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ, আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর ৬, ঢাকা