করোনাভাইরাসের টিকার চতুর্থ ডোজ নেওয়া কতটা জরুরি?
করোনা মহামারির আতঙ্ক কমে গেলেও সংক্রমণ থেমে নেই। সংক্রমণ প্রতিরোধে গতকাল মঙ্গলবার দেশের মানুষকে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকার চতুর্থ ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। সারা দেশের স্থায়ী টিকাকেন্দ্রগুলোতে এ টিকা দেওয়া হবে। করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধা, ষাটোর্ধ্ব নানা জটিল রোগে আক্রান্ত এবং অন্তঃসত্ত্বারা এ টিকা পাবেন। তৃতীয় ডোজ নেওয়ার চার মাস পর নেওয়া যাবে চতুর্থ ডোজ। ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি, যাঁরা ইতিমধ্যে তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের এ কর্মসূচির আওতায় টিকা দেওয়া হবে। তবে এরই মধ্যে চতুর্থ ডোজ নিয়ে চলছে নানাবিধ আলোচনা—এই ডোজের প্রয়োজন আছে কি না, কাদের জন্য বেশি প্রয়োজন ইত্যাদি।
গবেষণা যা বলছে
গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ টিকার চতুর্থ ডোজ নিরাপদ। এই ডোজ অ্যান্টিবডির ঘনত্ব এবং প্রতিরোধক্ষমতাকে যথেষ্ট বৃদ্ধি করে। গবেষণায় এখন পর্যন্ত চতুর্থ ডোজের ভ্যাকসিন-সম্পর্কিত গুরুতর প্রতিকূল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা এবং ক্লান্তির মতো সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল।
কিছু অংশগ্রহণকারীর চতুর্থ ডোজের আগেও উচ্চ অ্যান্টিবডি স্তর পরিলক্ষিত হয় এবং চতুর্থ ডোজ থেকে সামান্যই বৃদ্ধি পাওয়ার প্রমাণ দেখা যায়। গবেষকেরা বলেছেন, এই প্রবণতা পূর্ববর্তী সময়ে কোভিডে সংক্রমিত মানুষের মধ্যেও লক্ষ করা গেছে, যা থেকে বোঝা যায় যে বেজলাইন মাত্রা বেশি হলে চতুর্থ ডোজ কোভিড প্রতিরোধের ক্ষমতা তেমন বাড়াতে পারে না।
বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য সুরক্ষা
গত জানুয়ারি থেকে প্রথম দেশ হিসেবে ইসরায়েল চতুর্থ ডোজ প্রদান শুরু করে। সেখানে প্রথমে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের দেওয়া হয়। পাশাপাশি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণদের ফাইজার ভ্যাকসিনের চতুর্থ ডোজ প্রদানে অনুমোদন দেয়। জনসংখ্যার সংক্রমণ এবং গুরুতর কোভিড রোগ প্রতিরোধে চতুর্থ ডোজটি কতটা কার্যকর হয়েছে, এ সম্পর্কে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, ডোজের এক মাসে গুরুতর কোভিড রোগীর হার তিন—ডোজ গ্রুপের তুলনায় ৩ দশমিক ৫ গুণ কম।
যাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কম রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন রোগীদের মধ্যে তিনটি ডোজের পর অ্যান্টিবডির প্রতিক্রিয়া কম বা অপর্যাপ্ত পরিমাণে দেখায়, যা কোভিড প্রতিরোধে অকার্যকর। তাই শনাক্তযোগ্য অ্যান্টিবডি পেতে তাঁদের চতুর্থ ডোজ প্রয়োজন।
বুস্টার ডোজের ভবিষ্যৎ
বিশ্বের একাধিক টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা এখন যৌথ টিকা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে; যা বর্তমান টিকাগুলোর চেয়ে বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কোনো কোনো সংস্থা আবার ফ্লুর জন্য তৈরি আরএসভি ভ্যাকসিনের সঙ্গে করোনার ভ্যাকসিন মিলিয়ে টিকা তৈরির চেষ্টা করছে। ২০২৩ সাল নাগাদ তা বাজারে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
*ডা. নওসাবাহ্ নূর: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।