থাইরয়েড নিয়ে ৫টি ভ্রান্ত ধারণা
ধরা যাক, মোটামুটি সুস্থ জীবনযাপন করছেন এমন একজন নারী গর্ভধারণ করার পর হঠাৎ রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ল, তাঁর থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে বা থাইরয়েডের টেস্টের রিপোর্টে অসামঞ্জস্য আছে।
কিংবা ধরুন, বহু চেষ্টার পরও কারও ওজন কমছে না বা অবিরত চুল পড়ছে। পরীক্ষা করে দেখা গেল, তাঁর দেহে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কম। অনেকের এ রকম হঠাৎ অন্য কোনো কারণে পরীক্ষা করাতে গিয়ে রোগটি ধরা পড়ে। দেশে থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অনেক।
তবে অনেকেরই এ সম্পর্কে আছে কিছু ভুল ধারণা। এমন কিছু ভুল ভাঙিয়ে দিলেন ঢাকার গ্রিন লাইফ হাসপাতালের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তানজিনা হোসেন।
খাদ্যাভ্যাসের কারণে থাইরয়েডের সমস্যা হয়
আদতে কোনো নির্দিষ্ট খাবারের জন্য থাইরয়েডের সমস্যা হয় না। আবার কোনো নির্দিষ্ট খাবার এড়িয়ে চললে থাইরয়েডের সমস্যা প্রতিরোধও করা যায় না। এটা ঠিক যে থাইরয়েডের কিছু সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে কিছু খাবার খেতে নিষেধ করা হয়ে থাকে। যেমন গলগণ্ড থাকলে ক্রসিফেরাস গোত্রের সবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি খেতে নিষেধ করা হয়।
কিন্তু পরিমিত পরিমাণে খেলে কিন্তু কোনো ক্ষতি নেই। এর অর্থ এই নয় যে এসব খাবার খাওয়ার কারণে থাইরয়েডের সমস্যা সৃষ্টি হবে। থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে আয়োডিন লাগে। তাই আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমে যেতে পারে। তাই লবণকে আয়োডিনসমৃদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার খেলেই যে থাইরয়েডের সব সমস্যা থেকে বাঁচা যাবে, তা–ও কিন্তু নয়।
নির্দিষ্ট কোনো খাবার খেলে এ সমস্যা সেরে যায়
কোনো খাবারের কারণে যেমন এ রোগ হয় না, তেমনি নির্দিষ্ট কোনো খাবার খেলে এ রোগ সেরেও যায় না। অর্থাৎ খাবারের সঙ্গে থাইরয়েডের রোগ প্রতিরোধ বা প্রতিকার কোনোটিরই বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক নেই।
তবে হাইপোথাইরয়েডিজম হলে ওজন বাড়ে, রক্তে ক্ষতিকর চর্বি বাড়ে বলে এমন ডায়েট করা উচিত, যাতে ওজন বা চর্বি না বাড়ে।
থাইরয়েডের সমস্যা মানেই গলা ফোলা
থাইরয়েডের সমস্যা মানেই কিন্তু গলার সামনে ফোলা বা পিণ্ড থাকা নয়। থাইরয়েডের সব ধরনের সমস্যায় গলা না–ও ফুলতে পারে। কেবল নির্দিষ্ট কিছু সমস্যাতেই গলার সামনে ফোলা বা গোটাজাতীয় কিছু দেখা যায়।
উপসর্গ না থাকলে থাইরয়েডের চিকিৎসার প্রয়োজন নেই
থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যে প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা না-ও থাকতে পারে। কিছু কিছু সমস্যা খুবই পরিচিত, যেমন ক্লান্তি, অবসাদ, ভুলে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি, চুল পড়া বা ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। সে কারণে অনেকেই চিকিৎসা নিতে চান না। কিন্তু চিকিৎসা না করালে পরে নানা জটিলতা হতে পারে।
আবার অনেক সময় হরমোনের মাত্রা বর্ডার লাইনে থাকলে সেই মুহূর্তে সবার চিকিৎসা না–ও লাগতে পারে। তাই পরীক্ষায় হরমোনের তারতম্য পাওয়া গেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তিনিই ঠিক করবেন চিকিৎসা লাগবে কি না।
গলগণ্ড হলে কেটে ফেলে দিতে হবে
গলগণ্ড বা থাইরয়েড ফুলে গেলেই সার্জারি করে কেটে ফেলে দিতে হবে, এ ধারণা ভুল। বেশির ভাগ গলগণ্ডই নিরীহ এবং কোনো ক্ষতি করে না। সাধারণত সিঙ্গেল নডিউল বা একটি ছোট গোটা থাকলে তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হয় এবং এফএনএসি করে নিশ্চিত হতে হয় যে তার ক্যানসারের সম্ভাব্যতা কতটুকু।
দক্ষ হাতে ভালো যন্ত্রে আলট্রাসনোগ্রাম করেও ক্যানসারের সম্ভাব্যতা অনেকটাই যাচাই করা যায়। যদি ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে, তবে তা কেটে ফেলে দেওয়াই ভালো।
তার মানে এই নয় যে গলগণ্ডমাত্রই ক্যানসার এবং তা কাটা উচিত।