বোন টিবি বা হাড়ে যক্ষ্মা হলে বুঝবেন কীভাবে

মেরুদণ্ডের হাড়ে যক্ষ্মা হলে এটিকে বিশেষভাবে পটস ডিজিজ বলা হয়ে থাকেছবি: পেক্সেলস

হাড়ে কি যক্ষ্মা হয়? হ্যাঁ, হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলে বোন টিবি। এর বেশির ভাগই হয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেমন ভারত, বাংলাদেশ, চীন, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ায়। হাড়ে যক্ষ্মা হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ না করলে পরে জটিলতা বেড়ে হাড় ভেঙেও যেতে পারে।

হাড়ের যক্ষ্মা

যক্ষ্মা একটি জীবাণুবাহিত রোগ। যক্ষ্মা শরীরের বিভিন্ন অংশে হতে পারে, ফুসফুসে ও ফুসফুসের পর্দায় হতে পারে, অন্ত্রনালি, কিডনি, অস্থিসন্ধি ও লিম্প্ফনোডে হতে পারে। পাশাপাশি হাড়ে, বিশেষ করে মেরুদণ্ডের হাড়ে যক্ষ্মা হতে পারে। মেরুদণ্ডের হাড়ে যক্ষ্মা হলে এটিকে বিশেষভাবে পটস ডিজিজ বলা হয়ে থাকে। যক্ষ্মার জীবাণু সাধারণত ফুসফুস বা অন্য কোনো স্থান থেকে রক্তবাহিত হয়ে মেরুদণ্ডে বা হাড়ে পৌঁছায়। পাশাপাশি হাড়ের ভেতর প্রদাহও এটি করতে পারে। এটিকে বলা হয় অস্টিওমায়েলাইটিস।

লক্ষণ

হাড়ে বা মেরুদণ্ডে যক্ষ্মা হলে ওই স্থানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা, জ্বর, অরুচি, ওজন কমার মতো উপসর্গ দেখা যায়। ব্যথার কারণে রোগী পিঠ অতিরিক্ত সোজা করে হাঁটে। কখনো হাত দিলে মেরুদণ্ডে একটু ফোলা অংশ টের পাওয়া যায়। হাড় থেকে পরে মেরুদণ্ডের স্নায়ুতে চাপ প্রয়োগ করে, এমনকি প্যারালাইসিসও হতে পারে। শুরুর দিকে অনেক সময় এটি এক্স–রেতে ধরা না–ও পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা ও টিবি–সম্পর্কিত পরীক্ষা করে নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন। এমআরআই পরীক্ষায় সাধারণত এই রোগ ধরা পড়ে।

সন্দেহ হলে আগে তাঁর যক্ষ্মা রোগ হয়েছিল কি না, জানা উচিত। নিজের না হলেও যাঁদের সঙ্গে থাকেন, তাঁদের কারও আগে যক্ষ্মা হয়েছে কি না, সেটি জানাও গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন

যক্ষ্মা হলে কি হাড় ভেঙে যেতে পারে?

যক্ষ্মার জীবাণু হাড়ের ভেতর ঢুকে এর গঠনগত পরিবর্তন করে ফেলে। ধীরে ধীরে এটি হাড়কে ক্ষয় করতে থাকে। এটি হাড়ের পাশাপাশি মেরুদণ্ডের ভেতরে যে ডিস্ক থাকে, সেটিকে নষ্ট করার চেষ্টা করে। পাশাপাশি এটি ইনফেকশনজনিত পুঁজও তৈরি করে। সর্বোপরি পুরো হাড়ের ভেতর ক্ষয় ও চাপ তৈরি করে হাড় ভেঙে ফেলতে পারে।

হাড়ে যক্ষ্মা হলে দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা এবং প্রয়োজনে শল্যচিকিৎসা দরকার হয়। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই মঙ্গল। স্নায়ু বিনষ্ট হয়ে গেলে বা প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসায় সফলতার সম্ভাবনা কমে যায়। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, অপুষ্টি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস, ফুসফুস বা অন্য কোনো যক্ষ্মার ঠিকমতো চিকিৎসা না করা—এসব হাড়ের যক্ষ্মার জন্য দায়ী। মেরুদণ্ড বা হাড়ে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার পাশাপাশি অন্যান্য উপসর্গ টের পেলে দেরি না করে সঠিক কারণ অনুসন্ধান করা উচিত।

ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি