শিশুদেরও হতে পারে মানসিক বিপর্যয়, জেনে নিন এর কিছু লক্ষণ
শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বহু পরিবারেই অবহেলিত। শিশুদের মনের জগৎটা অনেক ক্ষেত্রেই বড়দের চোখের আড়ালে থেকে যায়। কিন্তু শিশুরাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে নানান কারণে। তারা ভুগতে পারে দুশ্চিন্তা, হতাশা, আচরণগত সমস্যাসহ নানাভাবে। আর এই মানসিক যাতনা শিশুর বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভুক্তভোগী শিশুদের অনেকেই বড় হওয়ার পরও সেই প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্তি পায় না। পড়ালেখা, সামাজিক সম্পর্ক, এমনকি শিশুর ভালো থাকাও নির্ভর করে শিশুর মনোজগতের ওপর। শিশু যদি মানসিক সমস্যায় ভোগে, কিছু উপসর্গ থেকে অভিভাবকেরা তা আঁচ করতে পারেন। জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু বিষয়—
দুশ্চিন্তা
অতিরিক্ত চিন্তা করতে বা ভয় পেতে দেখলে সচেতন হোন। এটি শৈশবে দুশ্চিন্তার লক্ষণ হতে পারে। দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত শিশু অন্যদের সঙ্গে মিশতে কিংবা স্কুলে যেতে মারাত্মক অনীহা প্রকাশ করতে পারে। কোনো কারণ ছাড়াই পেটব্যথা, মাথাব্যথাও হতে পারে।
হতাশা
শিশুরা স্বভাবতই চঞ্চল হয়ে থাকে। হাসিখুশি ভাব, প্রাণোচ্ছলতা শিশুর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু হতাশাগ্রস্ত শিশু সব সময় দুঃখবোধে নিমজ্জিত থাকে। আনন্দের কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে। প্রায়ই তেমন কোনো কারণ ছাড়া কান্নাকাটি করে, রাগ প্রকাশ করে, বিরক্ত হয়ে থাকে। তাদের ঘুম আর খিদের ধরনও বদলে যেতে পারে।
অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার
এ সমস্যায় আক্রান্ত শিশুর মধ্যে মনোযোগের অভাব দেখা যায়। অতিরিক্ত অস্থিরতাও এর একটি লক্ষণ।
আচরণগত সমস্যা
প্রায়ই অতিরিক্ত জেদ করা, আগ্রাসী ভাব কিংবা অবাধ্য আচরণ শিশুর জন্য স্বাভাবিক নয়। মিথ্যা বলা, চুরি করা বা অসামাজিক আচরণ করাও শিশুর আচরণগত সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার
সামাজিক পরিসরে অন্যদের সঙ্গে আলাপ করতে কিংবা চোখের দিকে সরাসরি তাকাতে অসুবিধা বোধ করে এ সমস্যায় আক্রান্ত শিশুরা। দেরিতে কথা বলা ও খেলাধুলায় অনাগ্রহও এর উপসর্গ। একই কাজ বারবার করে থাকে এই শিশুরা।
খাওয়াদাওয়ায় সমস্যা
শুনতে একটু অন্য রকম লাগলেও খাবার নিয়ে সমস্যা হওয়া মানসিক বিপর্যয়ের অংশ। ওজন বা খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনা কিংবা খাওয়ার পর বারবার বাথরুমে যাওয়া এমন সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার
কোনো খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়া শিশু বারবার দুঃস্বপ্ন দেখতে পারে। বারবার চোখের সামনে সেই একই ঘটনা দেখতে পেতে পারে সে। নির্দিষ্ট কোনো জায়গা, ব্যক্তি কিংবা কাজকে এড়িয়েও চলতে পারে।
করণীয়
শিশুর মধ্যে মানসিক বিপর্যয়ের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো এর কারণ খুঁজে বের করা। শিশুকে মন খুলে কথা বলার সুযোগ দিন। শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। শিশুর সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করুন। শিশুকে ভালোবাসার উষ্ণতা দিন। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া