মুখগহ্বর ও খাদ্যনালির ক্যানসার রোগী এত বেশি কেন
বাংলাদেশে মুখগহ্বর ও খাদ্যনালির ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক। নতুন রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। খাদ্যনালি কিংবা মুখগহ্বরের কোনো অংশে ক্যানসার হলে একপর্যায়ে রোগীর জন্য খাবারদাবার গ্রহণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াই ভীষণ কষ্টকর হয়ে পড়ে। অথচ বেঁচে থাকার জন্য খাবার তো খেতেই হবে। ক্যানসার–সংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতা তো আছেই।
মুখগহ্বর ও খাদ্যনালির ক্যানসারের সঙ্গে একজন মানুষের রোজকার জীবনধারা গভীরভাবে সম্পর্কিত। যেসব অভ্যাসের কারণে মুখগহ্বর ও খাদ্যনালির সরাসরি ক্ষতি হয়, সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া আবশ্যক। তামাক মুখগহ্বর ও খাদ্যনালির শত্রু, আপনি যেভাবেই তা গ্রহণ করুন না কেন। তামাক ও তামাকজাত পণ্যের কারণে মুখগহ্বর ও খাদ্যনালির কোষে ক্ষত সৃষ্টি হতে থাকে। এই ক্ষত থেকেই একসময় ক্যানসার হয়।
কারণগুলো জানা থাক
সিগারেট, ই-সিগারেট, পান, সাদাপাতা, সুপারি, চুন, জর্দা, গুল, খইনি—সবই মুখগহ্বর ও খাদ্যনালির ক্যানসারের জন্য দায়ী। দেশের বহু মানুষ এসব পণ্যের কোনো না কোনোটি গ্রহণ করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ধূমপানের হার অনেক বেড়েছে। আমাদের দেশের যত মানুষ মুখগহ্বর ও খাদ্যনালির ক্যানসারে আক্রান্ত, তাঁদের ৮০–৯০ শতাংশেরই তামাক বা তামাকজাত পণ্য সেবনের ইতিহাস রয়েছে। আজকাল কেউ কেউ অ্যালকোহলও গ্রহণ করেন। এটিও এ ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
এ ছাড়া যাঁরা মুখগহ্বরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে যত্নশীল নন কিংবা যাঁদের দাঁতের প্রান্ত অত্যধিক তীক্ষ্ণ, তাঁদের মুখগহ্বরের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা খাবার খেলেও হতে পারে খাদ্যনালির ক্যানসার। এই যেমন শুঁটকিতে যদি ডিডিটি দেওয়া থাকে, তাহলে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আয়রনের ঘাটতি, অতিরিক্ত ওজন কিংবা অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির জন্যও খাদ্যনালির ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। নিয়মিত অতিরিক্ত গরম খাবার বা পানীয় কিংবা অতিরিক্ত ঝাল খাবার খেলেও খাদ্যনালির ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে।
প্রতিকার
সাধারণভাবে মুখগহ্বর ও খাদ্যনালির ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য অস্ত্রোপচার ও রেডিওথেরাপিই মূল চিকিৎসা। কোনো কোনো রোগীর কেমোথেরাপিরও প্রয়োজন হতে পারে। টার্গেটেড বা নির্ধারিত থেরাপিরও সুযোগ রয়েছে। যাঁরা নিয়মিত তামাক বা তামাকজাত পণ্য গ্রহণ করেন, তাঁদের কোনো উপসর্গ না থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শমাফিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো উচিত। কারণ, প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার ধরা পড়লে চিকিৎসাপদ্ধতি সহজ হয়।
প্রতিরোধ
মুখগহ্বর ও খাদ্যনালির ক্যানসার প্রতিরোধে সব বয়সী মানুষেরই কিছু বিষয় মেনে চলা প্রয়োজন—
তামাক ও তামাকজাত কোনো পণ্য সেবন করা যাবে না।
মুখগহ্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। অন্তত দুবেলা দাঁত ব্রাশ করুন। খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলকুচি করুন। দাঁতের প্রান্ত ধারালো থাকলে চিকিৎসা নিন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি গ্রহণ করুন। আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান। শারীরবৃত্তীয় কারণে নারীদের আয়রনের ঘাটতি বেশি হয়। তাঁদের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করা আবশ্যক।
প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। নিতান্তই খেতে হলে এগুলোর মোড়কে লেখা রাসায়নিক সম্পর্কে জেনে নিন। ক্যানসারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, এমন রাসায়নিক থাকলে ওই পণ্য নেবেন না। নাইট্রোস অ্যামাইন এমন একটি রাসায়নিক। শুঁটকি খেতে হলে বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছ থেকে নিন।
অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অতিরিক্ত ঝাল কিংবা অতিরিক্ত গরম খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন।
অ্যালকোহল বর্জন করুন।
অনুলিখন: রাফিয়া আলম