গাড়ি চালানোর সময় অসাবধানতাবশত অনেকেই নিজের অজান্তে আঘাতের শিকার হন। আঘাত ছোট বা বড় যেটাই হোক, মেরুদণ্ডে আঘাত পেলে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
গাড়িতে বসে মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো চালকের সিটবেল্ট না পরা। সিটবেল্ট শরীরকে দৃঢভাবে জায়গায় আটকে রাখে। আর সিটবেল্ট ছাড়া থাকলে শরীরের ওপরের অংশ উন্মুক্ত থাকে, এতে একটু অসাবধানতায় মেরুদণ্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো, গতিসীমা অতিক্রম করে গাড়ি চালানো। গাড়ি যত দ্রুতগতিতে যায়, তত বেশি বেগবান হয়, শরীরও একই গতিতে চলে। যখন কোনো পরিস্থিতি গাড়িকে দ্রুত থামাতে হয়, তখন আকস্মিক গতির রূপান্তর আঘাত সৃষ্টি করে। এ সমস্যা মেরুদণ্ডে আঘাতের ঝুঁকি তৈরি করে। তাই এ জাতীয় দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো বাদ দিতে হবে, সিটবেল্ট পরে গাড়ি চালাতে হবে এবং গাড়ি চালানোর সময় গতিসীমা অতিক্রম করা যাবে না।
লক্ষণ
কাঁধ ও ঘাড়ের অনমনীয়তা বা শক্ত হয়ে যাওয়া; পায়ের গোড়ালিতে সংবেদনশীলতা হ্রাস বা অসাড়তা; ক্লান্তি, মাথাব্যথা, অনিয়ন্ত্রিত পেশি ক্র্যাম্পস, হাঁটার গতি কমে যাওয়া ইত্যাদি এ ধরনের নীরব আঘাতের কারণে হতে পারে। ঘাড় ও পিঠে ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া প্রায়ই হুইপল্যাশের সঙ্গে সম্পর্কিত। সঙ্গে মাথাব্যথাও হতে পারে। কশেরুকা ফেটে যেতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না করালে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন দেখা দেয়।
ফেটে যাওয়া কশেরুকার কারণে পক্ষাঘাত, মূত্রাশয় নিয়ন্ত্রণ হ্রাস ও স্নায়ু প্রান্তগুলোয় অসাড়তা দেখা দিতে পারে। দুর্ঘটনার কারণে স্লিপ ডিস্ক হতে পারে। মানে কশেরুকার মাঝখানে নরম টিস্যুগুলো স্থান থেকে সরে যায়। এর ফলে পায়ে তীক্ষ্ণ ও হঠাৎ ব্যথা অনুভূত হয়। স্লিপড ডিস্ক যদি ক্রমে হার্নিয়াটেড ডিস্কে পরিণত হয়, তবে পিঠের নিচের অংশে ব্যথা সৃষ্টি করে। হাঁটা ও চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পায়ের দুর্বলতাও হয়।
যদি দাঁড়াতে, হাঁটতে ও বসতে সব সময় কষ্ট অনুভব করে থাকেন; ঘাড়, মাথা বা পিঠের মধ্যে চাপ বোধ করেন; মলমূত্র নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়; হাত বা পায়ের আঙুলে স্পর্শের অনুভূতি হারিয়ে ফেলেন তবে দ্রুত অভিজ্ঞ নিউরোলজিস্টের কাছে যেতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা দরকার। নিউরোলজিস্ট প্রদাহ কমাতে ও ব্যথা কমানোর ওষুধ দিতে পারেন। আঘাতের মাত্রা বেশি ও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে দ্রুতই তা করতে হবে। ফিজিওথেরাপিরও প্রয়োজন হতে পারে। এটি শরীরের আঘাত পাওয়া অংশে গতিশীলতা, শক্তি ও সংবেদন ফিরে পেতে সহায়তা করবে। মনে রাখবেন, মেরুদণ্ডের ক্ষতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরোপুরি নিরাময় হয় না।
অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা