আপনার কি শুধু ফুড ক্রেভিং হয়?
খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে সব সময়ই যে আপনার মন আপনার প্রতিজ্ঞা মেনে চলবে, ব্যাপারটা কিন্তু একেবারেই তেমন নয়। সুস্বাদু খাবার খেতে মন তো চাইতেই পারে।
হুটহাট কিছু একটা খেতে ভীষণ ইচ্ছা করলে, অর্থাৎ ফুড ক্রেভিং হলে দু–একবার মনের কথাও আপনাকে শুনতে হবে। তাই খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও সপ্তাহে একটাবার মনের মতো কিছু খাবারের খানিকটা আয়োজন করতেই পারেন।
তাতে খুব একটা ক্ষতি নেই। কিন্তু প্রায়ই যদি উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন, সুস্বাদু খাবার খেতে মন চায়, তাহলে ওজন কমানো সত্যিই কষ্টদায়ক একটা বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
সাধারণভাবে অনেকেই মনে করেন, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের অর্থ হলো খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া কিংবা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা। আদতে ব্যাপারটা এমন নয়। সুস্থ থাকতে আপনাকে সারা দিনে পর্যাপ্ত খাবার খেতে হবে।
অবশ্য কী খাচ্ছেন, তা খেয়াল রাখা জরুরি। সাধারণভাবে বলা যায়, রোজকার ভাত ও অন্যান্য শর্করাজাতীয় খাবারের পরিমাণ কমানো এবং ফাস্ট ফুড, বিরিয়ানি, তেহারি বা উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার না খাওয়াই হতে পারে একটি চমৎকার স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন। কিন্তু আপনার যদি প্রায়ই পিৎজা, পাস্তা কিংবা বিরিয়ানির ক্রেভিং শুরু হয়, তাহলে এই স্বাস্থ্যকর ধারা বজায় রাখবেন কীভাবে? জানাচ্ছেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
রসনায় হোক তৃপ্তি
সত্যিকার অর্থেই যদি আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাহলে ক্ষুধার কষ্ট করবেন না। নির্দিষ্ট সময় অন্তর কিছু না কিছু খান। সারা দিন আপনি কখন কী খাবেন, সে ব্যাপারে মোটামুটিভাবে একটা পরিকল্পনা করে রাখুন। প্রতি বেলাতেই খানিকটা আমিষ ও আঁশসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ভালো। তাহলে সহজে ক্ষুধা লাগবে না। নানা রকম ফলমূল, সবজি, শাক, লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, ওটস, ছাতু প্রভৃতিতে পর্যাপ্ত আঁশ রয়েছে। সারা দিনে কয়েকবার বাদামও খাবেন।
খাবারের পদগুলোকে সুস্বাদু করে তুলুন। কেবল একটা সাদামাটা ফল খেতে ভালো না লাগলে সালাদ খেতে পারেন। তাতে খানিকটা আমিষ যোগ করতে পারেন। খাবারের স্বাদ বাড়বে, পুষ্টিও মিলবে। নানা রকম মসলা যোগ করুন খাবারে। কেবল সবজি দিয়েও যে কত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করা যায়, তা শিখে নিতে পারেন। যেমন মজাদার স্যুপ তৈরি করতে পারেন ক্রিম ছাড়াই।
বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ করুন। একই ধরনের খাবারে একঘেয়েমি আসাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া কেবল একই ধারার খাবার খেলে পুষ্টির ঘাটতি হয়। এই ঘাটতির কারণেও বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার খাওয়ার ইচ্ছা হতে পারে আপনার।
পর্যাপ্ত পানি খান
শরীরে পানির অভাব হলে অনেক সময়ই আমাদের মনে হয়, ক্ষুধা পেয়েছে। তাই নির্দিষ্ট সময় পরপর খানিকটা পানি কিংবা স্বাস্থ্যকর পানীয় খাওয়া প্রয়োজন। এমন অভ্যাস গড়ে তুললে হুট করেই কোনো অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা জেগে ওঠার প্রবণতা কমে।
মন নিয়ন্ত্রণের চর্চা করুন
নিজের সুস্থতার জন্যই ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য মনস্থির করুন। কারও কথার চাপে নয়। পিৎজা, পাস্তা কিংবা বিরিয়ানির মতো খাবার খেতে ইচ্ছা করলেও সপ্তাহের সেই দিনটার জন্য অপেক্ষা করুন, যেদিন আপনি নিজেকে পছন্দের খাবার খাওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন।
আবার আজকেই যদি খুব বেশি ইচ্ছা করে খাবারটি খেতে, তাহলে আজ তা খেয়ে নিলেও সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, এ প্রতিজ্ঞা করুন নিজের কাছেই।