কীভাবে বুঝবেন আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে
আজ বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, একে নিয়ন্ত্রণে রাখুন ও দীর্ঘজীবী হোন’।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ হচ্ছে ১২০/৮০ মি.মি. পারদ। রক্তচাপ ১৩০-১৩৯/৮০-৮৯ মি.মি. পারদ হলে তাকে বলে স্টেজ ১ হাইপারটেনশন বা প্রথম পর্যায়ের উচ্চ রক্তচাপ। তবে ১৪০/৯০–এর বেশি হলে তাকে বলে স্টেজ ২ হাইপারটেনশন। ডাক্তারের চেম্বারে বা রক্তচাপ মাপতে গিয়ে যদি কারও রক্তচাপ ১৩৯/৮৯-এর বেশি পাওয়া যায় এবং পরপর তিনবার এ রকম হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে। তবে রক্তচাপ মাপার আগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়ার আছে। হাসপাতালে ৩০ মিনিট শান্তভাবে বসে থাকার পর সাধারণত রক্তচাপ দেখা উচিত। রক্তচাপ মাপার সময় ধূমপান, কথা বলা ও উত্তেজনা দেখানো যাবে না।
উচ্চ রক্তচাপ ১৩৯/৮৯ পর্যায়ে শনাক্ত হলে প্রথমেই ওষুধ না দিয়ে জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে বলা হয়। যেমন নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা, সুষম স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা মেনে চলা, অতিরিক্ত বা বাড়তি লবণ পরিহার, ধূমপান বর্জন ইত্যাদি। জীবনাচরণ পরিবর্তনের পরও যদি রক্তচাপ বেশি থাকে ও পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে শুরুতে কম ডোজে ওষুধ দেওয়া হয়। বিশেষ করে কারও যদি ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনির জটিলতা থাকে, তাহলেও দেরি না করে স্টেজ ১ হাইপারটেনশনেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ শুরু করে দেওয়া হয়।
৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের অর্ধেক এবং প্রাপ্তবয়স্কদের এক–চতুর্থাংশের উচ্চ রক্তচাপ আছে। এঁদের অনেকেই জানেন না যে তাঁদের এই সমস্যা আছে। তাই প্রত্যেকের নিয়মিত রক্তচাপ মাপা জরুরি। ৪০ বছরের নিচে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, তা দেখা উচিত। নানা ধরনের ওষুধের কারণে (স্টেরয়েড, ব্যথার ওষুধ, বিষণ্নতার ওষুধ, জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল), কিডনির জটিলতা, গর্ভধারণ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (এডরেনাল গ্রন্থির সমস্যা: কুশিং সিনড্রোম, ফিওক্রোমোসাইটোমা, থাইরয়েড বা প্যারা থাইরয়েডের সমস্যা, পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যা), স্থূলতা ইত্যাদি হতে পারে এই উচ্চ রক্তচাপের কারণ।
উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় নীরব ঘাতক। স্বাভাবিকের চেয়ে ২ মি.মি. রক্তচাপ বাড়লে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে ৭ শতাংশ আর স্ট্রোকের ১০ শতাংশ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে হতে পারে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিওর, কিডনির জটিলতা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু। নিয়মিত চিকিৎসা না নিলে ও অনিয়ন্ত্রিত থাকলে রক্তনালি ও কিডনির কিছু পরিবর্তন হয়, তখন রক্তচাপ আরও বেড়ে যায়। একে বলে রেজিস্ট্যান্ট হাইপারটেনশন। তখন ৪ বা তার বেশি ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
সাধারণত নিয়ন্ত্রণে রাখা বলতে রক্তচাপকে ১৩০/৮০ মি.মি. বা এর কাছাকাছি রাখা বোঝানো হয়। রোগীর আনুষঙ্গিক অন্যান্য অবস্থা বুঝে চিকিৎসক উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ দিয়ে থাকেন। নানা ধরনের ওষুধ রয়েছে, আছে তাদের নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও। যেমন ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারে পায়ে পানি আসতে পারে। এসিই ইনহিবিটর খেলে কাশি হতে পারে, পটাশিয়াম বেড়ে যেতে পারে। ডাইইউরেটিকের জন্য লবণের ঘাটতি হতে পারে। বিটা ব্লকার হাঁপানি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই কোন ওষুধটি আপনার জন্য প্রযোজ্য, তা জানার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। ‘অমুক ওই ওষুধ খেয়ে ভালো আছেন,’ আশপাশের মানুষের এহেন পরামর্শ শুনে নিজেও সেটি খাওয়া শুরু করবেন না। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সব ওষুধ খাওয়া যাবে না। তাই সন্তান নিতে চাইলে আগে থেকেই চিকিৎসককে অবহিত করতে হবে। কোনো ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে চিকিৎসককে জানান। তিনি হয়তো পাল্টে দেবেন। কিন্তু রক্তচাপের ওষুধ সব সময় সেবন করতে হয়। এমন নয় যে নিয়ন্ত্রণে এলে বন্ধ করে দেবেন।
তবে কখনো ডায়রিয়া, বমি বা শরীর থেকে পানি কমে গেলে, ভাইরাল জ্বর বা সংক্রমণে (যেমন ডেঙ্গু জ্বর, সেপসিস) হলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। তখন সাময়িকভাবে চিকিৎসক ওষুধ বন্ধ রাখতে পারেন।