রিকেট রোগে শিশুদের বাড়ন্ত হাড়ের ত্রুটি দেখা দেয়। খনিজ পদার্থ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’র অভাবে এ রোগ হয়। এতে শিশুর হাড় বেঁকে যায়, হাড়ে ব্যথা হয়, পায়ের বিকৃতি দেখা যায়; এমনকি হাড় নরম হয়ে ভেঙে যেতে পারে। শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
কারণ কী
মূলত দেহে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’র অভাব এই রোগের মূল কারণ। পাশাপাশি ফসফরাসের অভাবে এ রোগ হতে পারে। রোদের অভাব, খাবারে ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি, পরিপাকতন্ত্রে ভিটামিন ‘ডি’ শোষণ কমা এ রোগকে ত্বরান্বিত করে। পাশাপাশি লিভার ও কিডনির রোগের কারণে এ রোগ হতে পারে।
কীভাবে হয়
সূর্যের আলোয় দেহে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন খাবার যেমন তৈলাক্ত মাছ, মাছের তেল, মাখন, ডিম ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়। রক্তে কোনো কারণে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে ভিটামিন-ডি খাদ্যনালি থেকে রক্তে ক্যালসিয়ামের শোষণ বৃদ্ধি করে এবং হাড়ে থাকা ক্যালসিয়াম শোষণ করে রক্তে নিয়ে আসে। এতে হাড়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিতে হাড় নরম ও ধীরে ধীরে বেঁকে যায়।
কীভাবে বুঝবেন
শিশুদের দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে—
খুলির হাড় নরম হওয়া।
মাথার খুলি চারকোনা বাক্সের মতো হওয়া।
দুধদাঁত বিলম্বে ওঠা, দাঁত ক্ষয় হওয়া।
বুকের পাঁজরের হাড়গুলো বুকের সামনে বৃদ্ধি পাওয়া।
কবুতরের বুকের মতো বুকের খাঁচা পরিবর্তিত হওয়া।
কবজি ও গোড়ালির হাড় বেড়ে যাওয়া
হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত পা সামনের দিকে বেঁকে যাওয়া।
হাঁটুর কাছ থেকে দুই পা দুই দিকে বেঁকে যাওয়া
টিটানিতে আক্রান্ত হওয়া।
জটিলতা
শ্বাসনালির প্রদাহ, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, আয়রন ঘাটতিতে রক্তস্বল্পতা, শারীরিক উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া, টিটানি রোগে আক্রান্ত হওয়া, হাড় নরম হয়ে ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি জটিলতা হতে পারে।
চিকিৎসা কী
শিশুর দৈনন্দিন খাবারে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। নানা সবজি যেমন—ঢ্যাঁড়স, কুমড়াসহ নানা শাক এবং কাঁটাওয়ালা ছোট মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দৈনিক ৬০০ মিলিলিটার দুধ বা দুধজাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট দেওয়া হয়। শিশুকে নিয়মিত সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে রোদে ৩০ মিনিট সময় রাখলে রিকেটস রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
চিকিৎসায় ৭৫ ভাগ শিশুই সুস্থ হয়। তবে বয়স ছয় বছরের বেশি হলে এবং পা বেঁকে যাওয়ার পরিমাণ ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি হলে ব্রেস চিকিৎসা, আবার কখনো কখনো শল্যচিকিৎসা লাগে।
প্রতিরোধ
প্রসূতি মাকে ভিটামিন ‘ডি’ দিতে হবে। শিশুদের দুধ ও খাবারে ভিটামিন ‘ডি’ যুক্ত করতে হবে। স্বল্প ওজনের অপরিণত শিশুর জন্মের পর দুই সপ্তাহ থেকে ভিটামিন ‘ডি’ দিতে হবে।
অধ্যাপক ডা. ইমনুল ইসলাম, শিশুরোগ বিভাগ, বিএসএমএমইউ