কোষ্ঠকাঠিন্য শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। যখন একজন ব্যক্তি সহজে মলত্যাগ করতে পারেন না, সাধারণত এক থেকে দুই দিন পরপর মলত্যাগ করেন এবং মল শুষ্ক ও শক্ত হয়, সে অবস্থাকেই কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।
চিকিৎসকদের মতে, কারও যদি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানা হয়, তখন এ অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। অন্যান্য ঋতুর চেয়ে শীতকালে কোষ্ঠকাঠিন্য একটু বেশি দেখা দেয়।
কেন হয়
খাবারে আঁশের পরিমাণ কম থাকলে বৃহদান্ত্র খাবার থেকে পানি শোষণ করে। এর ফলে মল শুষ্ক ও শক্ত হয়ে যায়।
বৃহদান্ত্রের চারটি অংশ আছে। এর মধ্যে সিগময়েডে সবচেয়ে বেশি ও শেষবারের মতো পানি শোষিত হয়। তাই মল যখন বের হয়, তখন প্রথম অংশের মলটুকু তুলনামূলক বেশি শুষ্ক ও শক্ত হয়। মল বৃহদান্ত্রে যত বেশি সময় থাকবে, তত বেশি পানি শোষিত হবে এবং মল বেশি শুষ্ক ও শক্ত হবে।
জটিলতা
কোষ্ঠকাঠিন্য এক থেকে তিন মাসের বেশি স্থায়ী ও ঘন ঘন হলে পাইলস, অ্যানাল ফিশার, মলদ্বার বেরিয়ে আসা, পেটফাঁপা ও অরুচির মতো কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ
মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা।
কায়িক শ্রম না করা।
যথেষ্ট পানি ও অন্যান্য তরল পান না করা।
নিয়মিত ফাইবার বা আঁশসমৃদ্ধ শাকসবজি ও মৌসুমি ফল না খাওয়া।
অনিদ্রা।
চা-কফি, ফাস্ট ফুড ও ভাজাপোড়া খাবার বেশি গ্রহণ করা।
আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ব্যথানাশক ওষুধ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
কিছু রোগের কারণে হতে পারে, যেমন থাইরয়েড বা কোলনের সমস্যা।
যেভাবে খাদ্যাভ্যাসে সমাধান
আপেল, পাকা কলা, নাশপাতি ও আঙুরে যথেষ্ট আঁশ থাকে। পাকা পেঁপে, পাকা বেলের শরবত ও অ্যালোভেরা জুস—এ খাবারগুলো কোষ্ঠকাঠিন্যে ওষুধের মতো কাজ করে।
সব ধরনের শাক বেশি খেতে হবে। যেমন পুঁইশাক, পালংশাক, লালশাক ও কচুশাক।
সবজির মধ্যে ঢ্যাঁড়স, পেঁপে, ফুলকপি, পাতাকপি ও কচুরলতি বেশ উপকারী।
পরিপাকতন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত টক দই খেতে হবে।
দিনে দুই থেকে তিনবার তোকমা দানা, ইসবগুলের ভুসি বা চিয়া সিড খাওয়া খুব উপকারী।
ঘন ঘন পরিমিত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে পানির চেয়ে গাঢ়, যেমন মধু, টক দই, বেলের শরবত, পেঁপের শরবত, অ্যালোভেরা জুস ও আখের রস পান করতে হবে।
আয়রন ও ক্যালসিয়াম–জাতীয় ওষুধের কারণে হয়ে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পান্তা কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে বেশ কার্যকর।
শর্করা হিসেবে লাল আটা, লাল চাল খাবার তালিকায় রাখতে চেষ্টা করতে হবে।
যেসব খাবার বাদ দেবেন
কম আঁশযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে। যেমন কাঁচকলা, ময়দার তৈরি খাবার।
চা-কফি, পিৎজা, ফাস্ট ফুড, চিপস, চকলেট ও ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া যাবে না।
গরু বা খাসির মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।
রান্নায় মসলার পরিমাণ কমাতে হবে। ভাজি বা ভুনা খাবারের বদলে কম মসলাযুক্ত রান্না করা খাবার খেতে হবে।
কিছু শুকনা খাবার পরিহার করতে হবে। যেমন মুড়ি, চিড়া, গুঁড়া দুধ ও বিস্কুট। নুডলস, পাস্তার মতো খাবার খাবেন না।
মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল