ডেঙ্গু হলে কখন অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিবডি আর সিবিসি পরীক্ষা করাবেন
সূর্যের প্রচণ্ড তাপের সঙ্গেই দেখা যাচ্ছে মেঘের ঘনঘটা। বৃষ্টিও হচ্ছে। সঙ্গে শঙ্কাও বাড়ছে। কারণ, বর্ষার হাত ধরেই আসে প্রাণসংহারী ডেঙ্গু। এ সময় অবশ্য জ্বরজারির হার এমনিতেই বেশি থাকে।
ঋতু পরিবর্তনের কারণ, অন্যান্য ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও এ সময় বেশি বাড়ে। তাই কারও জ্বর হলেই তা ডেঙ্গুজনিত কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। রোগীর রোগের ইতিহাস বা শারীরিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে অন্যান্য জ্বর থেকে ডেঙ্গুকে সব সময় আলাদা করা সম্ভব হয় না। তাই প্রয়োজন হয় কিছু রক্ত পরীক্ষা।
সাধারণত ডেঙ্গুতে জ্বরের একেবারে প্রথম দিন থেকেই রক্তে আবির্ভাব ঘটে একটা নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের। একে বলা হয় এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন। চার–পাঁচ দিনের মাথায় কমতে শুরু করে।
আবার চার–পাঁচ দিনের থেকে রক্তে দেখা দিতে পারে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে জন্মানো অ্যান্টিবডি, যাকে বলা হয় আইজিএম (ইমিউনোগ্লোবিউলিন এম)।
৯ থেকে ১০ দিনের মাথায় আইজি এম কমে গিয়ে চলে আসে আইজিজি (ইমিউনোগ্লোবিউলিন জি) অ্যান্টিবডি। এটা দীর্ঘদিন ধরে রক্তে বিরাজ করে।
তাই একটি বা দুটি রক্ত পরীক্ষা করলেই ডেঙ্গুর ফলাফল জানা যাবে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব পরীক্ষার ফলাফল বদলে যেতে পারে।
আবার পরীক্ষা–নিরীক্ষায় নেগেটিভ আসলেই যে ডেঙ্গু নেই, তা–ও নিশ্চিত করে বলা যায় না। রক্ত পরীক্ষায় প্রমাণিত না হলেও কিন্তু ডেঙ্গু হতে পারে।
ডেঙ্গু পরীক্ষার সঙ্গে সাধারণত সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, কমপ্লিট ব্লাড পিকচার টেস্ট নামেও পরিচিত) পরীক্ষাটিও করা হয়। এর মাধ্যমে ডেঙ্গু আছে কি নেই, তা নিশ্চিত না হওয়া গেলেও এর সম্পর্কে ও এর জটিলতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য সিবিসি পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। তবে ডেঙ্গু পরীক্ষাজনিত এত সব বিভ্রান্তি আছে বলেই এসব পরীক্ষা–নিরীক্ষা নিজে নিজে করলে নানা ভুল–বোঝাবুঝির অবকাশ থাকে।
তাই জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, ডেঙ্গুতে আরও কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। ডেঙ্গু জটিল আকার ধারণ করছে কি না, তার জন্যও আছে কিছু পরীক্ষা।
আবার অন্যান্য কারণ, যেমন টাইফয়েড বা ইউরিন ইনফেকশনের কারণে জ্বর হচ্ছে কি না, সে জন্যও কিছু পরীক্ষার দরকার পড়ে। তাই কবে প্রথম জ্বর হলো, সেই হিসাব রাখা জরুরি।
মনে রাখবেন—
জ্বরের প্রথম চার–পাঁচ দিনের ভেতর এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতে হয়।
জ্বরের পাঁচ দিনের পর অ্যান্টিজেন নেগেটিভ হয়ে যায়। তাই এ সময় করতে হয় অ্যান্টিবডি পরীক্ষা। এটা দুই ধরনের হয়।
৫ থেকে ১০ দিনের ভেতর আইজিএম পজিটিভ থাকে, এর পর আইজিজি পজিটিভ হয়।
সিবিসি করা যায় যেকোনো সময়। বরং ডেঙ্গু হলে হেমাটোক্রিট ও প্লাটিলেটের ওঠানামা পর্যবেক্ষণ করার জন্য একাধিকবার সিবিসি করার দরকার হতে পারে।
লেখক: ডা. শাহনূর শারমিন, সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
Photo by Polina Tankilevitch from pexels