মাত্র ৩ মাসে ২৪ কেজি ওজন কমিয়েছি
তটিনী রহমান (ছদ্মনাম) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। দুই সন্তানের মা। মাকে হারিয়ে ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন। বিষণ্নতায় ভুগে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া এবং সন্তান ধারণ—সব মিলিয়ে একসময় ওজনও তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে ৮২ কেজিতে পৌঁছায়। যখন বুঝলেন, বেশ ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, তখন ওজন নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী হলেন। ৩ মাসে ওজন কমিয়ে নেমে এলেন ৮২ কেজি থেকে ৫৮ কেজিতে।
মাত্র ৩ মাসে ৮২ কেজি থেকে ৫৮ কেজি! কেউ বিশ্বাসই করতে চায় না। ২০১৮ সালে প্রথম এবং ২০২০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো মা হই। সন্তান ধারণের সঙ্গে ওজন বৃদ্ধির সম্পর্ক থাকলেও আমার গল্পটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। মায়ের মৃত্যুতে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। সে সময় বিষণ্নতা থেকে বাড়তে শুরু করে ওজন। বিষণ্নতায় ভুগে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া এবং সন্তান ধারণ—সব মিলিয়ে একসময় ওজনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করে। বাড়তে বাড়তে গিয়ে ঠেকে ৮২ কেজিতে। সেই ওজন মাত্র ৩ মাসের চেষ্টায় কমিয়ে ৫৮–তে এনেছি।
শুরুটা যেভাবে
সারা জীবনই স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন ছিল। হঠাৎ এমন অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। তখনই চোখে পড়ে ফেসবুকের একটি গ্রুপ। নাম ‘লুজ টু গেইন’। অস্বাস্থ্যকর জীবন বাদ দিয়ে কীভাবে স্বাস্থ্যকর জীবন শুরু করা যায়, সদস্যদের সেই অনুপ্রেরণা জোগানোই গ্রুপটির মূল উদ্দেশ্য। খুব আগ্রহ নিয়ে গ্রুপে যোগ দিই। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একজন বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিই। শুরু করি ‘ওজন কমানোর মিশন’।
খেতে হবে ঘরের খাবার
কর্মজীবী হলে বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা খুবই কষ্টসাধ্য। কিন্তু ওজন কমাতে চাইলে ঘরের খাবারেই নিজেকে আটকে ফেলতে হবে। আমিও তা–ই করেছি। দুপুরের খাবারটা নিজেই তৈরি করে অফিসে নিয়ে গিয়েছি সব সময়।
তৈলাক্ত খাবার কে ‘না’
যেকোনো খাবারের ক্যালরি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় তেল। তাই রান্নায় তেলের ব্যবহার যত কম করা যায়, ততই ভালো। রান্নায় সাধারণত অলিভ অয়েল ব্যবহার করতাম। যতটুকু না দিলেই নয়, ঠিক ততটুকু তেলই ব্যবহার করি।
সকালের নাশতায় ডিম
অনেকেই ভাবেন ডিম ওজন বৃদ্ধি করে। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ওজন কমানোর যাত্রায় সকালের নাশতায় দুটি করে ডিম খেয়েছি। এখনো তা–ই করি। পাশাপাশি পাতলা করে বানানো লাল আটার একটি বা দুটি রুটির সঙ্গে কখনো রেখেছি সবজি কখনো বা ছোলার ডাল।
হাঁটতে হবে ১ ঘণ্টা
খাবারের অতিরিক্ত ক্যালরি শরীরে জমতে না দেওয়ার উত্তম উপায় হচ্ছে শুয়েবসে না থেকে কর্মতৎপর থাকা। টানা তিন মাস খুব নিয়ম করে ঘরের কাছের পার্কে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে হেঁটেছি।
মিষ্টান্নকে ‘না’
তিন মাসের জন্য মিষ্টিজাতীয় খাবারকে একপ্রকার ‘না’ই বলে দিয়েছি। খুব ইচ্ছা করলে খেয়েছি নানান মৌসুমি ফল। ভিন্নতা আনতে কয়েক রকমের ফল কেটে টক দই দিয়ে মিশিয়ে নিয়েছি।
অল্প ভাত, বেশি তরকারি
ওজন কমাতে গিয়ে ভাত বাদ দেওয়া যাবে না। তবে পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। অন্যদিকে, তরকারির পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে হবে। দুপুরের খাবারের তালিকায় ভাতের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন মাছ খেয়েছি।
রাতে যখন খেতে হবে
ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে খাবার কিছুটা হজম হয়ে যায় এবং ঘুমের সময় শরীরে চর্বি জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
অনুলিখন : আবৃতি আহমেদ