শিশু হামাগুড়ি দিতে শিখলে যে বিষয়গুলোয় সতর্ক হতে হবে

শিশু সাধারণত ৭ থেকে ১০ মাস বয়সে হামাগুড়ি দিতে শেখে
মডেল: জুয়াইফির। ছবি: প্রথম আলো

সাধারণ শিশু এক বছরে হাঁটতে শেখে আর হাঁটার পথে প্রথম পদক্ষেপ হলো হামাগুড়ি। হামাগুড়ি দিতে শেখার মাধ্যমে প্রথম স্বাধীনভাবে চলাফেরার স্বাদ পায় মানবশিশু, এমনকি নিজের ইচ্ছেমতো অনুসন্ধান করার সুযোগ পায়।

কিন্তু এই নিত্যনতুন অনুসন্ধানের কারণে বিপদের আশঙ্কাও কম থাকে না।

শিশু সাধারণত ৭ থেকে ১০ মাস বয়সে হামাগুড়ি দিতে শেখে। অনেক বাচ্চা এর আগে পরেও শিখতে পারে। আবার খুব সচরাচর না হলেও কোনো কোনো বাচ্চা হাঁটার পথে হামাগুড়ি দেওয়ার ধাপটি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে পারে। হামাগুড়ি দেওয়ার সময়টায় শিশুর জন্য প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা।

এখন যেহেতু শীতকাল, তাই খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চা যেন ঠান্ডা মেঝেতে হামাগুড়ি না দেয়। প্রয়োজনে মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে রাখুন। কার্পেটের আঁশে বাচ্চাদের অ্যালার্জি হতে পারে। বাচ্চা আঘাত পেতে পারে এমন কিছু মেঝেতে পড়ে থাকলে, সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। আসবাবের কোনাগুলো ফোম–জাতীয় জিনিস দিয়ে ঢেকে দেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে বাজারে আসবাবের কোনা আটকে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কর্নার প্রটেক্টর পাওয়া যায়।

বাচ্চা ঘুমালে বিছানার চারদিক বালিশ দিয়ে ঘিরে রাখা উচিত। এতে সে হঠাৎ ঘুম ভেঙে হামাগুড়ি দিয়ে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে কম থাকবে। জেগে থাকার সময়টা বাচ্চাকে হামাগুড়ির স্বাধীনতা দিতে হবে। মেঝেতে হামাগুড়ি দিলেই বাচ্চা বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে মেঝেতে যেন পয়সা, মার্বেল, বোতাম, পুঁতি, ছোট পাথর, খেলনার ছোট ব্লক, বোতলের ছিপি, ছোট স্ক্রু ও ক্লিপ পড়ে না থাকে।

পড়ে থাকা এসব জিনিস বাচ্চা চলার পথে মুখে নিয়ে বিরাট দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। ওষুধ, মশার ওষুধ, জীবাণুনাশক দ্রবণ, কেরোসিন ও অন্যান্য দাহ্যবস্তুও শিশুর নাগালের বাইরে রাখতে হবে। টেবিল ফ্যান চালানো থাকলে খেয়াল রাখতে হবে যেন বাচ্চা চলন্ত ফ্যানে আঙুল না দিয়ে ফেলে।

বাচ্চাদের হাতের নাগালের মধ্যে থেকে শ্বাসরোধকারী, ধারালো বস্তু ও সহজে ভেঙে যেতে পারে, এমন বস্তুগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। বাড়ির আশপাশে জলাশয় থাকলে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া আশপাশে পানিপূর্ণ পাত্র থাকাও অনিরাপদ। হামাগুড়ি দিতে দিতে বাচ্চা এসব জায়গায় গিয়ে পানিতে মুখ দিয়ে শ্বাসরোধ হয়ে অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

আরামদায়ক প্যান্ট অথবা পায়জামা বাচ্চার হাঁটুকে হামাগুড়ি দেওয়ার সময় সুরক্ষা দিতে পারে। পোশাকে রশি বা বেল্ট না থাকলেই ভালো। কারণ, এগুলো শরীরে পেঁচিয়ে বাচ্চার হামাগুড়ি অভিযানে বাধা হতে পারে। এ ছাড়া বাচ্চার হাঁটুতে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ‘নি প্যাড’ ব্যবহার করা যেতে পারে। কঠিন বস্তুর ওপর হামাগুড়ি দিলে বাচ্চার হাঁটু ছড়ে যেতে পারে, এ জন্য বাচ্চাকে সুরক্ষা দিতে শক্ত মেঝেতে কম্বল বিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর