গর্ভের শিশু সুস্থ কি না, জানতে আজকাল চলে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসের সময় (১৩ সপ্তাহ থেকে ২৭ সপ্তাহ) বিশেষ আলট্রাসনোগ্রাম স্ক্যান বা অ্যানোমেলি স্ক্যান এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে শিশুর গঠনগত কোনো ত্রুটি আছে কি না, খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়। সেই সঙ্গে শারীরিক বৃদ্ধি সঠিক হচ্ছে কি না, তা-ও দেখা হয়।
এই স্ক্যান ১৮ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে করা উচিত। স্ক্যানটির অন্যান্য নাম লেভেল ২ আলট্রাসাউন্ড, অ্যানাটমি স্ক্যান, মিড প্রেগন্যান্সি স্ক্যান, ২০ উইক স্ক্যান, সেকেন্ড ট্রাইমিস্টার স্ক্যান ইত্যাদি। এ ছাড়া এটিকে টিআইএফএফএ (টার্গেটেড ইমেজিং ফর ফাটাল অ্যানোমেলিস) বলা হয়।
কী কী বোঝা যায়
এই আলট্রাসনোগ্রাম স্ক্যানের মাধ্যমে বোঝা যায়—
জরায়ুতে ভ্রূণের সংখ্যা, গর্ভফুলের অবস্থান, পানির পরিমাণ, হার্ট রেট, গর্ভাবস্থার বয়স ইত্যাদি। সম্ভাব্য প্রসব তারিখ বা ইডিডি নির্ধারণ করা হয়।
গর্ভের শিশুর মাথার আকৃতি, মাথার হাড়ের গঠন, মস্তিষ্কের ত্রুটি ইত্যাদি। নিউরাল টিউব অথবা স্পাইনাল কর্ডের ত্রুটিও এই দ্বিতীয় ট্রাইমিস্টার তথা দ্বিতীয় তিন মাসের সময় ধরা পড়ে।
হৃৎপিণ্ডের চারটি প্রকোষ্ঠের আকৃতি ও গঠন ঠিক আছে কি না, তা দেখা যায়। প্রতিটি হার্ট বিটের সঙ্গে ভালভগুলো যথাযথভাবে খুলছে ও বন্ধ হচ্ছে কি না, জানা যায়। হৃৎপিণ্ডের মধ্যকার রক্ত চলাচল স্বাভাবিক কি না, তা-ও দেখা সম্ভব।
পাকস্থলী ও মূত্রথলি ঠিকভাবে তৈরি হয়েছে কি না এবং কিডনি দুটি জায়গামতো আছে কি না, তা দেখা হয়। কিডনিতে যদি পানি জমে বা সিস্ট হয় অথবা কোনো কিডনি যদি না থাকে, তা-ও শনাক্ত করা যায়।
শিশুর পেটের মাংসপেশি ও চামড়ার আবরণ, হাত ও পায়ের হাড়ের বিকৃতি, নাকের হাড়ের গঠন দেখে জেনেটিক ডিফেক্ট এবং শিশুর ঠোঁট কাঁটা আছে কি না, তা-ও বোঝা যায় এ পরীক্ষার মাধ্যমে।
করণীয়
অ্যানেনকেফালি নামের জন্মগত ত্রুটির জন্য শিশুর মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের গঠন ব্যাহত হয়, শিশুর মুখ ও ঘাড় বিকৃত থাকে। এ ক্ষেত্রে মেডিকেল টার্মিনেশন বা গর্ভপাতের দরকার হয়।
আবার কিছু ত্রুটি নিরাময়যোগ্য। সেগুলো সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা থাকলে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সে জন্য গর্ভের শিশুর শারীরিক গঠন জানা গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. সাজেদা রুমানা আহমেদ, কনসালট্যান্ট সনোলজিস্ট, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড, মিরপুর