ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া (টিএন) হলে মুখে হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এটি কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই যন্ত্রণা মুখের এক দিকে বা উভয় দিকে হতে পারে।
কারণ
ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার কারণ হলো পঞ্চম ক্রেনিয়াল নার্ভের (স্নায়ু) সমস্যা বা এর ওপর অতিরিক্ত চাপ। মস্তিষ্কের নিচের অংশে শিরা বা ধমনির সঙ্গে লেগে যদি ট্রাইজেমিনাল নার্ভের ওপর অস্বাভাবিক চাপ পড়ে, তবেই এই ব্যথা হয়। এ ছাড়া বার্ধক্য, মাল্টিপল স্কেলেরোসিস, মস্তিষ্কে টিউমার বা নার্ভের পাশে থাকা টিউমারের চাপ ও অন্য কোনো সমস্যার কারণেও এই ব্যথা হতে পারে।
লক্ষণ
বৈদ্যুতিক শকের মতো আকস্মিক তীব্র ব্যথা হয়। সাধারণত পুরুষের তুলনায় নারীদের এই রোগ বেশি হয়। শেভ করার সময় বা মুখে হাত বুলালে কিংবা দাঁত ব্রাশ করার সময় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। ব্যথা সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে দুই মিনিটের কম স্থায়ী হয়। বারবার ব্যথা হয়। ট্রাইজেমিনাল নার্ভ যেসব জায়গায় অনুভূতি সরবরাহ করে যেমন গাল, চিবুক, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট এবং মাঝেমধ্যে চোখ ও কপালে এ ব্যথা হয়।
নির্ণয়
রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসক সাধারণত তিনটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন। এক. ব্যথার ধরনটি কী, দুই. ব্যথার উৎপত্তিস্থল এবং তিন. কী করলে ব্যথা বাড়ে। সঙ্গে কিছু নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা করলে রোগ নির্ণয় করা যায়। রোগের কারণ নির্ধারণের জন্য কখনো কখনো এমআরআই, ইএমজি, এনসিএস ইত্যাদি করা লাগতে পারে।
চিকিৎসা
একজন নিউরোলজিস্ট অথবা নিউরোসার্জনের তত্ত্বাবধানে থেকে এই রোগের চিকিৎসা করাতে হবে। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে—
ওষুধ: ব্যথানাশক ওষুধ এসিটামিনোফেন, এনএসএআইডিএস, অ্যান্টিকনভালসেন্ট কারবামাজেপিন, অক্সকারবাজেপিন, গাবাপেনটিন, মাসল রিলাক্সেন্ট ব্যাকলোফেন।
রিহ্যাবিলিটেশন: ফিজিক্যাল থেরাপি-ইলেকট্রিক্যাল ইস্টিম্যুলেশন, আইস ম্যাসেজ, হট প্যাকস, বায়োফিডব্যাক; স্পিচ থেরাপি (কথা বলতে বা খাবার গিলতে যাঁদের সমস্যা হয়); কগনেটিভ বিহেভিয়েরাল থেরাপি; অ্যাডাপটিভ ইকুইপমেন্ট-টেলিফোন এয়ারসেট; ব্যায়াম-লো ইনটেনসিটি অ্যারোবিক এক্সারসাইজ; রিলাক্সেশন টেকনিকস-মেডিটেশন ইত্যাদি।
ইন্টারভেনশন: ট্রাইজেমিনাল নার্ভ ব্লক, লোকাল অ্যানেসথেটিক নার্ভ ব্লক, নিউরোলাইটিক ব্লক উইথ অ্যালকোহল/গ্লাইসেরল, আকুপাংচার।
সার্জারি: সাধারণত অন্যান্য চিকিৎসা কাজ না করলেই কেবল নিউরোসার্জারির প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে একজন নিউরোসার্জন মাইক্রোভাস্কুলার ডিকমপ্রেশন, গামা নাইফ রেডিওসার্জারি পদ্ধতিতে এই অস্ত্রোপচার করে থাকেন।
অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়