সাকিব আল হাসানের চোখের সমস্যা সেন্ট্রাল সেরাস কোরিওরেটিনোপ্যাথি কেন হয়, চিকিৎসা কী
বিশ্বকাপের সময় চোখে সমস্যাটা প্রথম ধরা পড়লে চেন্নাইয়েই চক্ষুবিশেষজ্ঞ দেখিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। এরপর ঢাকা ও লন্ডনেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। আর গতকাল দুপুরে গেলেন সিঙ্গাপুরে। সমস্যা সম্পর্কে সাকিব যেটা বলেছেন, সব চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণও তা–ই বলে। অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে তাঁর চোখের রেটিনার নিচে একধরনের তরল পদার্থ জমছে, যেটা ঝাপসা করে দিচ্ছে দৃষ্টি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে সেন্ট্রাল সেরাস কোরিওরেটিনোপ্যাথি বা সিএসসি। এই সমস্যা কেন ও কাদের হয়? চিকিৎসা কী?
সমস্যাটি মূলত চোখের রেটিনার। রেটিনা চোখের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলো সংবেদনশীল স্নায়ুর স্তর। রেটিনা বা স্নায়ুর স্তরটি প্রাথমিকভাবে কোনো কিছু দেখার যে কাজ, তার সূচনা করে। এই স্তরের কেন্দ্রবিন্দুকে বলে মেকুলা। এখানে কোনো সমস্যা হলে শুরু হয় দৃষ্টি সমস্যা। সেন্ট্রাল সেরাস কোরিওরেটিনোপ্যাথিতে এই মেকুলায় অজানা কারণে তরল জমা হয়ে দৃষ্টি সমস্যার সৃষ্টি করে। এই তরল জমা হওয়ার বিষয়টি কেবল মেকুলাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এখানে কেন তরল জমা হয়, কীভাবে জমা হয়, এসব এখনো বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। তবে এটুকু ধারণা করা হয়, রেটিনার নিজস্ব গঠনশৈলীর ত্রুটি দেখা দেওয়ায় মেকুলাতে তরল জমা হয়।
সাধারণত ২০-৪৫ বছর বয়সে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। এতে প্রায়ই এক চোখ আক্রান্ত হয়, তবে কখনো কখনো দুই চোখ একসঙ্গে আক্রান্ত হতে পারে। পুরুষদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, আপনা–আপনি সেরে যায়। আবার কখনো কখনো স্থায়ী দৃষ্টি সমস্যার সৃষ্টি করে।
সমস্যাটির বিস্তারিত জানা না গেলেও কিছু ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ সম্পর্কে আঁচ করা যায়, যা সম্ভবত সমস্যাটির সঙ্গে সম্পর্কিত। সাধারণত মাঝবয়সে এর প্রাদুর্ভাব বেশি ধরা পড়ে। মানসিক চাপ, স্টেরয়েড ব্যবহার, হেলিকোভেক্টর পাইলরি ইনফেকশন বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, ডায়ালাইসিস, গর্ভাবস্থা, উচ্চ রক্তচাপ, অটোইমিউন ডিজিজ ইত্যাদি রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হয়।
উপসর্গ
প্রাথমিক অবস্থায় হালকা দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়। হঠাৎ এক চোখে দৃষ্টি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কমে যায় এবং অনেক সময় তার সঙ্গে বস্তুর আকৃতিতে বিভ্রম সৃষ্টি করে। বস্তুর আকৃতি বড় (মেটামরফপসিয়া) বা ছোট (মাইক্রোপসিয়া) দেখায়। অনেক সময় ডিসক্রোমাটোপসিয়া বা বস্তু আঁকাবাঁকা দেখায়।
শনাক্তকরণ
সমস্যাটি শনাক্ত করা বিশেষ কঠিন কিছু নয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় উপসর্গ খুব গভীর না হওয়ায় রোগী বা চিকিৎসক উভয়ই বিষয়টি হালকাভাবে নেন। মনে হয় যেন এমনিতেই সেরে যাবে। অনেক সময় আপনা–আপনি সেরেও যায়। ফলে বিষয়টি শনাক্ত না হয়ে চাপা পড়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে যখন এর পুনরাবৃত্তি হয়, তখন এর উপসর্গের মাত্রা কিছুটা তীব্র হয়। তখন বেশির ভাগ রোগী চিকিৎকের শরণাপন্ন হন। অথবা প্রাথমিক উপসর্গ যখন প্রলম্বিত হয়, তখন চিকিৎসা নিতে ছুটে যান। চোখের দুটি পরীক্ষা করলে সহজেই সমস্যাটি শনাক্ত করা যায়। একটি হলো ফান্ডাস ফ্লোরেসেন্স এনজিওগ্রাম বা চোখের এনজিওগ্রাম এবং দ্বিতীয়টি হলো ওসিটি মেকুলা।
চিকিৎসা
তিন-ছয় মাসের মধ্যে এটি আপনা–আপনি ভালো হয়ে যায়। যদিও ৫০ শতাংশ রোগীর বেলায় এটি আবারও ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে। রোগী কোনো ধরনের স্টেরয়েড ব্যবহার করলে তা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। এর মধ্যে যদি সেরে না যায়, তবে প্রয়োগ করতে হবে লেজার চিকিৎসা। তৃতীয় উপায় হলো চোখের ভেতর অ্যান্টি–ভিজিএফ ইনজেকশন পুশ করা। সেরে গেলেও অনেক সময় দৃষ্টি সমস্যার কিছুটা ঘাটতি থেকে যেতে পারে। তবে কোনো চিকিৎসাতেই সেরে ওঠার পূর্ণ নিশ্চয়তা থাকে না। আবার সেরে উঠলেও পরবর্তী সময়ে যে আর হবে না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে রোগীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ফলোআপে থাকতে হয়। পাশাপাশি জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি। মানসিক চাপ যথাসম্ভব কমাতে হবে। ঘুমের ব্যাপারে হতে হবে যত্নশীল।
ডা. মো. ছায়েদুল হক: কনসালট্যান্ট, আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, ঢাকা