ডায়াবেটিসে কখন ইনসুলিন দরকার হয়
ডায়াবেটিস মূলত বিপাকীয় রোগ। ইনসুলিনের ঘাটতি অথবা ইনসুলিন অকার্যকারিতার কারণে এ রোগ হয়। ডায়াবেটিস চিকিৎসার প্রথম ধাপ খাদ্যনিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত ব্যায়াম। পরবর্তী ধাপ হলো ওষুধ বা ইনসুলিন। বেশির ভাগ মানুষেরই ইনসুলিনের প্রতি ভীতি কাজ করে, কিন্তু ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইনসুলিন অত্যন্ত কার্যকর এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত একটি ওষুধ। আসুন জেনে নিই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির কোন কোন সময় ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়।
১. টাইপ–১ ডায়াবেটিস
এটি মূলত শিশু–কিশোর বা ৩০ বছরের আগে হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে ইনসুলিন উৎপাদনকারী অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে ইনসুলিন তৈরি হয় না। তাই এ ধরনের ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে একমাত্র চিকিৎসা ইনসুলিন।
২. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
গর্ভধারণের সময় ডায়াবেটিস হলে একমাত্র মেটফোরমিন–জাতীয় মুখে খাওয়ার ওষুধ নিরাপদ। অন্যান্য মুখে খাওয়ার ওষুধ সম্পূর্ণ নিষেধ। এ সময় ডায়াবেটিস খুবই সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় বলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইনসুলিন অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ইনসুলিন মা এবং গর্ভস্থ সন্তানের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।
৩. টাইপ–২ ডায়াবেটিস
আমাদের চারপাশে শতকরা ৯৫ ভাগই এ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ৩০ বছরের পর, ওজনাধিক্য বা স্থূল ব্যক্তিদের, যাঁদের খাদ্যাভ্যাস সঠিক নয় বা কায়িক শ্রম নেই বললেই চলে এবং পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে, তাঁরাই এই ডায়াবেটিসে বেশি আক্রান্ত হন। টাইপ–২ ডায়াবেটিসের মূল কারণ ইনসুলিন অকার্যকারিতা। তাই অনেক সময়ই কেবল খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও খাবার ওষুধে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। তারপরও এ ধরনের ডায়বেটিসে নিচে বর্ণিত ক্ষেত্রে ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়।
খালি পেটে ১৪ মিলিমোল এবং খাবারের দুই ঘণ্টা পর ১৬.৫ মিলিমোলের বেশি ব্লাড সুগার থাকলে।
এইচবিএওয়ানসি বা তিন মাসের ডায়াবেটিসের গড় ১০–এর বেশি হলে।
মুখে খাওয়ার তিনটি ওষুধ বা পর্যাপ্ত ডোজের পরও ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে না এলে।
জরুরি কোনো শারীরিক পরিস্থিতি, যাতে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, যেমন হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, যেকোনো তীব্র মাত্রার প্রদাহ বা সংক্রমণ। যেমন প্রস্রাবে সংক্রমণ, জন্ডিস, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া বা পায়ে ঘা।
যেকোনো অপারেশনের আগে ও পরে।
দীর্ঘমেয়াদি লিভার ও কিডনির সমস্যার জটিলতায়।
আমাদের একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে, একবার শুরু করলে সারা জীবন ইনসুলিন নিতেই হবে। অথচ আদতে বিষয়টি সম্পূর্ণ বিপরীত। অনেক ক্ষেত্রেই জরুরি অবস্থা কেটে গেলে আবার মুখে খাওয়া ওষুধে ফেরা সম্ভব।
ডা. অঞ্জনা সাহা, হরমোন ও ডায়াবেটিস রোগবিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা