প্রতিবছর লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব যান। তাঁদের কারও কারও বিভিন্ন রকমের শারীরিক সমস্যা থাকে। এর মধ্যে ডায়াবেটিস একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ।
ডায়াবেটিস রোগীদের নানাবিধ দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা থাকতে পারে, যার মধ্যে স্নায়বিক জটিলতা অন্যতম। এমন বিবেচনায় ডায়াবেটিস রোগীদের হজ পালনের ক্ষেত্রে নিজের পায়ের অবস্থা জানা ও যত্ন নেওয়ার বিশেষ তাগিদ থাকতে হবে। নয়তো হতে পারে বড় ধরনের জটিলতা।
হাজিদের প্রায় ১৫ শতাংশ ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিতে ভোগেন; যা পায়ের নানা জটিলতা যেমন ক্ষত, ঘা বা গ্যাংগ্রিন হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের আলসার হাজিদের চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি এবং অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের দরকার হতে পারে।
হাঁটতে গিয়ে প্রায় ৩১ শতাংশ হজযাত্রীর পায়ে ফোসকা পড়ে যায়, অন্য ২৫ শতাংশ রোগীর পা ফুলে যায়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীদের পায়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, দুর্বল ক্ষত নিরাময় এবং নিউরোপ্যাথি ও পেরিফেরাল ভাসকুলার রোগের উপস্থিতির কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা গুরুতর জটিলতার সম্মুখীন হন।
গ্রীষ্মের মাসগুলোতে মাটির উচ্চ তাপমাত্রার (প্রায় ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) কারণে পা পুড়ে যাওয়াও একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি, যা পরে পায়ের আলসারের কারণ হয়।
পায়ের সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করবেন কীভাবে
হাঁটার সময় ফাটল রোধ করতে রোগীকে প্রতিদিন দুবার ব্যবহার করার জন্য একটি ভালো মানের গন্ধবিহীন ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।
দৈনিক পা পরিষ্কার করা আবশ্যক এবং গরম পানিতে পা ডোবানো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
হজ পালনকালে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১৫ কিলোমিটারের দূরত্ব হলে, মোটরচালিত যান বা হুইলচেয়ার ব্যবহার করা নিরাপদ।
মসজিদের মধ্যে জুতা নিষিদ্ধ এলাকায় প্যাডেড মোজা ব্যবহার করা আবশ্যক; খালি পায়ে হাঁটা উচিত নয়।
হজ পালনকালে হাঁটার জন্য হালকা ওজনের, পায়ের গোড়ালি রক্ষা করে এবং বলের প্যাডিংসহ নরম প্যাডেড জুতা পছন্দ করা উচিত। জুতা যেন বেশি টাইট না হয়।
রোগীদের পা শুকনো রাখা উচিত এবং ওজু করার পর সুতির তোয়ালে দিয়ে মুছে নিতে হবে।
প্রদাহ ও সংক্রমণের লক্ষণ বিষয়ে এবং সন্দেহজনক ক্ষেত্রে অপরিবর্তনীয় টিস্যুর ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে যথাসময়ে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পায়ের কোথাও ফোসকা দেখা দিলে, পা শুষ্ক রাখা উচিত এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য যথাযথ পা স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সংক্রমিত ফোসকা দেখা দিলে অবিলম্বে সাহায্য নিন।
ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়