শরীর ফিট রাখতে ডায়েটের কোনো বিকল্প নেই। ওজন ঝরাতে কি কোনো ডায়েট অনুসরণ করেছিলেন? যেহেতু আপনি ভোজনরসিক, কীভাবে মেনে চলেছিলেন?
আশীষ চঞ্চলানি: প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলাম, আমার এমন খাবার প্রয়োজন, যা শরীরে শক্তি জোগাবে। সবার আগে তাই নিজেই খাবারের একটা তালিকা তৈরি করি। তালিকার বড় অংশজুড়ে ছিল প্রোটিন। এরপর আঁশ, আর সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল কার্বোহাইড্রেড। তাই বলে কার্বোহাইড্রেটের গুরুত্ব নেই, এমন নয়। আমার পাতে কার্বোহাইড্রেটের থেকে চর্বিজাতীয় খাবার বেশি ঠাঁই পেত। বিশেষ করে যেসব চর্বি শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্ক ও ত্বক ভালো রাখতে ভালো চর্বির বিকল্প নেই। আমাদের খাবারে কার্বোহাইড্রেট এমনিতেই বেশি থাকে। আর এই কার্বোহাইড্রেট যখন তেলে ভাজা হয়, তখন শরীরের জন্য হয়ে ওঠে ভয়ংকর। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার। কিন্তু এখন আমি ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের সঙ্গে একটা টক্সিক রিলেশনশিপে আছি। সপ্তাহের শেষে ছুটির দিনে কিংবা চিট ডেতে খেয়েছি বটে, কিন্তু ওজন কমানোর জন্য একে ‘না’ বলতে হয়েছে ঠিকই।
প্রতিদিন কী ধরনের খাবার খেতেন?
আশীষ চঞ্চলানি: দিন শুরু হতো ডিম দিয়ে। প্রতিদিন অন্তত ছয়টা ডিম খেতাম—সেদ্ধ কিংবা অমলেট। এরপর থাকত স্প্রাউটস। মূলত আঁশের জন্যই স্প্রাউটস খেতাম। সামান্য লবণ-মরিচ দিয়ে জিনিসটাকে আরও সুস্বাদু করে নিতাম। দুপুরে পাতে থাকত একটা রুটি আর ২০০ গ্রাম মুরগির মাংস। সঙ্গে থাকত শসা ও সেলেরির (পাথুনি শাক) জুস। এটা মূলত হজমে সহায়তা করে। পেটে যে পরিমাণ আঁশের প্রয়োজন, তা মেটাত এই জুস। প্রতিদিন কী পরিমাণ প্রোটিন খেতাম, তার একটা হিসাব থাকত আমার কাছে। সে অনুযায়ী সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এক চামচ হুই (ছানার পানি) খেতাম, যাতে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়। রাতের খাবারের জন্য আমার পছন্দ ছিল মুরগির মাংস। রুটি, ভাত বা কোনো কার্বোহাইড্রেট নয়, শুধু মুরগির মাংস। প্রতিদিনের ডায়েটে আমার ১৫০-১৬০ গ্রাম প্রোটিন থাকত। পেশি তৈরি করতে চাইলে কিংবা ওজন কমাতে চাইলে প্রোটিনের পরিমাণ নিয়ে সতর্ক থাকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আপনার ওজন যত কেজি, প্রতিদিন আপনার তত গ্রাম প্রোটিন খাওয়া উচিত। আপনার ওজন যদি হয় ৮০ কেজি, তবে প্রতিদিন আপনি ৮০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করবেন।
অনেকে বলে, ওজন কমাতে চাইলে চিনি একেবারে বাদ দিতে হবে। পছন্দের খাবার ছোঁয়াও যাবে না। আপনি কি এমন কিছু করেছিলেন?
আশীষ চঞ্চলানি: একেবারেই না। নিয়মিত রসমালাই আর গোলাপজাম খেতাম। চিনি দেওয়া চা আমার খুব পছন্দের। যদিও মানুষ এখন এটা বিশ্বাস করে না। আমি প্রতি সপ্তাহে এক দিন রাখতাম, যেদিন নিয়ম করে মিষ্টি আর চিনি দেওয়া চা খেতাম। রোববার রাত ছিল আমার ‘চিট ডে’। নিয়ম করে গোলাপজাম আর রসমালাই খেতাম। তবে একটা কৌশল খাটাতাম। আমার প্রতিদিনের ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা ঠিক রাখতাম। যেদিন মিষ্টি খেতাম, সেদিন হয়তো একটা রুটি কম খেলাম। একটা গোলাপজামে ১৫০-২০০ ক্যালরি থাকে। আমার প্রতিদিনের ক্যালরি ইনটেক ছিল ১ হাজার ৮০০। যেদিন গোলাপজাম খেতাম, সেদিন অন্য জায়গা থেকে ক্যালরি কম খেয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতাম।
অনেকেরই এই ভুল ধারণা আছে, ডায়েট মানলে পছন্দের সব খাবার দূরে সরিয়ে রাখতে হয়। ব্যাপারটা এমন নয়। আমাদের উপমহাদেশে উৎসব-পার্বণ লেগেই আছে। সেখানে গিয়ে ডায়েটের কথা আলাদা করে কেউ ভাবে না। আমার পরামর্শ হলো, এত কিছু নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। ডায়েটে থাকলেও প্রতি সপ্তাহে এক দিন নিজের পছন্দের খাবার খান। নিয়মকানুন ঠিক রেখে খাওয়াদাওয়া করলে কোনো সমস্যা হয় না। বিশ্বাস করুন, এতে আপনি মানসিকভাবেও অনেক ভালো থাকবেন। এ ছাড়া এক দিন মিষ্টি খাওয়ার পর মনে হবে, কাল তো মিষ্টি খেয়েছি, আজ সেটা শরীর থেকে ঝরাতে হবে। অপরাধবোধ থেকেই আপনি আরও বেশি করে নিজের খেয়াল রাখতে শুরু করবেন। অন্তত আমি তা-ই করেছি।
‘চিট ডে’ থাকা কি জরুরি?
আশীষ চঞ্চলানি: অবশ্যই। আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য ‘চিট ডে’ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ভাবে, মিষ্টি শরীরের সবচেয়ে বড় শত্রু। না, ব্যাপারটা এমন নয়। মিষ্টি নয়, শরীরের সবচেয়ে বড় শত্রু অতিরিক্ত খানাপিনা। যাঁরা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, একটাই অনুরোধ, খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণে আনুন, ক্যালরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে আনুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।
একটা উদাহরণ দিই। অনেকেই পিনাট বাটার খাওয়ার জন্য একটা টেবিলচামচ বের করে। শুরুটা এক টেবিলচামচ দিয়েই হয়। এরপর দেখা যায়, ২-৩ চামচ খেয়ে ফেলেছেন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে যতই ডায়েট করুন, লাভ নেই।
প্রতিদিন কি ক্যালরি মাপতেন?
আশীষ চঞ্চলানি: হ্যাঁ। প্রতিদিন মেপে মেপে খাবার খেতাম। শরীরে কতটুকু ক্যালরি নিচ্ছি, কতটুকু খাচ্ছি। নিয়মিত মাপতে মাপতে একটা সময় প্লেটের দিকে তাকালেই বলে দিতে পারতাম, কতটুকু ক্যালরি খাচ্ছি। মা যদি বাসায় মুরগির ঝোল রান্না করত, আমি না মেপেই নিজের প্রয়োজনমতো নিজের পাতে নিতে পারতাম।
কিছু খাবার আছে, যাতে অতিরিক্ত ক্যালরি থাকে। হ্যাঁ, খাবারগুলো হয়তো শরীরের জন্য অনেক ভালো। কিন্তু অতিরিক্ত ক্যালরি শরীরে জমা হয়ে থাকে। যেমন কাজুবাদাম, শরীরের জন্য অনেক ভালো। কিন্তু প্রতিটি কাজুবাদামে প্রায় ১০ ক্যালরি থাকে। প্রতিদিন যদি ৩০-৪০টি কাজুবাদাম খান, এখানেই তো ৩০০-৪০০ ক্যালরি হয়ে যায়। এভাবেই মনের অজান্তে শরীরে যোগ হয় অতিরিক্ত ক্যালরি।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস