কোরিয়ান তারকাদের ফিটনেসের রহস্য কী
কোরিয়ানদের সুন্দর ত্বকের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কে-পপ আর কে-ড্রামার কারণে এখন কোরিয়ান তারকাদের দিকেও দৃষ্টি সবার। কিন্তু কীভাবে তারকারা নিজেদের ফিটনেস ঠিক রাখেন? একহারা গড়ন আর পেটা শরীর তৈরি এবং তা বজায় রাখতে কোরিয়ান তারকারা খাদ্যাভ্যাসের সঠিক পরিকল্পনা, কঠোর পরিশ্রম আর নিয়মমাফিক জীবনযাপনের ভেতর দিয়ে যান প্রতিনিয়ত। তাঁদের ফিটনেস ঠিক রাখার পদ্ধতি হলো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা এবং এসবে ধারাবাহিক থাকা। তবে কোনোভাবেই তাঁরা ক্রেজি ক্র্যাশ ডায়েট বা খুব নিম্ন ক্যালরির ডায়েটে ঝুঁকে পড়েন না। চলুন বিস্তারিত জেনে আসি।
খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ও সুষম খাদ্যাভ্যাস
কোরিয়ান তারকারা খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের দিকে বেশ খেয়াল রাখেন। সেই সঙ্গে পরিমাণে অল্প কিন্তু উচ্চ ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবারের দিকে মনোযোগ দেন। তাঁদের খাদ্যতালিকায় থাকে চর্বিহীন প্রোটিন, শাকসবজি ও মিষ্টি আলুর মতো জটিল কার্বোহাইড্রেট। এই তারকারা অতিরিক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলেন এবং নিজের কাঙ্ক্ষিত ওজন অর্জনের জন্য শরীরে ক্যালরির ঘাটতি রেখে দেন।
সময়ের আগে এবং হালকা ডিনার
ঘুমানোর আগেই যাতে পরিপাকক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্য বেশির ভাগ কোরিয়ান তারকা সন্ধ্যা ৭টার আগেই রাতের খাবার খেয়ে নেন। অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ এড়াতে এবং গভীর রাতে যাতে ক্ষুধা না লাগে, সে জন্য তাঁরা সালাদ, স্যুপ আর গ্রিল করা হালকা খাবার খান।
উচ্চ প্রোটিন, কম কার্বযুক্ত খাবার
কোরিয়ান তারকারা দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে মুরগির বুকের মাংস, তোফু, ডিমের মতো প্রোটিনযুক্ত খাবার খান। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত কার্ব কম খান। এমন খাদ্যাভ্যাস তাঁদের চর্বি কমানোর পাশাপাশি পেশি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে তাঁদের ভেতরে কর্মশক্তি অটুট থাকে, করতে পারেন কঠোর পরিশ্রম। এমনকি দৈনন্দিন কাজকর্মে নিজেদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন অনায়াসে।
বিরতি দিয়ে উপবাস
বেশির ভাগ কোরিয়ান তারকাই বিরতি দিয়ে উপবাস পালন করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা ১৬: ৮ নিয়ম মেনে চলেন। দিনের ৮ ঘণ্টার মধ্যে খাওয়াদাওয়া পর্ব সেরে ১৬ ঘণ্টা উপবাস থাকেন। এ ধরনের উপবাস তাঁদের চর্বি বার্ন করতে, চর্বি পরিষ্কার রাখতে এবং কোনো ধরনের কঠোর ডায়েট ছাড়াই হালকাপাতলা গড়ন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত নাচের চর্চা
নিজেদের কাঙ্ক্ষিত শারীরিক গঠন ধরে রাখতে বেশির ভাগ কোরিয়ান তারকাই নাচের কঠোর অনুশীলন করেন। নাচের দৈনন্দিন রুটিন মেনে চলার কারণে তাঁদের স্ট্যামিনা বাড়ে, দেহের চর্বি কমে এবং পেশি শক্তিশালী হয়। ফলে এই তারকারা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে নাচের চর্চাকে একটি কার্যকর উপায় হিসেবে বেছে নেন।
বাদের খাতায় প্রক্রিয়াজাত খাবার ও মিষ্টি
জাংক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও কোমল পানীয় কোরিয়ান তারকারা ছুঁয়ে দেখেন না বলা চলে। এর বদলে তাঁরা ফল, শাকসবজি ও বাদামের মতো খাবার খান। এতে পেট ফাঁপা কিংবা অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দূর হয়। শরীর থাকে ঝরঝরে।
পিলাটিস ও যোগব্যায়াম অনুশীলন
কোরিয়ান তারকারা শরীরের গঠন ঠিক রাখার জন্য পিলাটিস ও যোগব্যায়াম বেছে নেন। শরীরের জয়েন্টগুলোতে বেশি চাপ প্রয়োগ না করে হালকা নড়াচড়ার মাধ্যমে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নমনীয়তা বাড়ানো, সুষম অবয়ব তৈরি এবং অন্যতম প্রধান পেশিগুলো তৈরির ক্ষেত্রে পিলাটিস ও যোগব্যায়াম অনুশীলন বেশ ফলপ্রসূ।
ডিটক্স চা আর পানি খাওয়া
কোরিয়ান তারকারা গ্রিন টি, বার্লি টি, ভেষজ চায়ের মতো ডিটক্স চা খান প্রতিদিন। সঙ্গে খান পর্যাপ্ত পানি। এসব শরীরে পানির পরিমাণ বজায় রাখার পাশাপাশি বিষাক্ত পদার্থ দূর করে, বিপাকক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার চাহিদা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
কার্ডিও আর স্ট্রেংথ ট্রেনিং
অনেক কোরিয়ান তারকাই চর্বি কমিয়ে শরীরের কাঠামো ঠিক রাখতে কার্ডিও ট্রেনিং করেন। যেমন দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, দড়িলাফ। আর স্ট্রেংথ ট্রেনিং, যেমন ভারোত্তোলন, বডিওয়েট এক্সারসাইজের মাধ্যমে চর্বিহীন হালকা গড়ন তৈরি করেন।
শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা
কোরিয়ান তারকাদের আদর্শ ওজন ধরে রাখার মূল চাবিকাঠিই হলো শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা। তাঁরা নিজেদের খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের রুটিন কঠোরভাবে মেনে চলেন। এতে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস জন্ম নেয় না এবং শরীর গঠনে অস্থায়ী কোনো সমাধানেও নির্ভরশীল হতে হয় না।
সূত্র: কোরিয়াবু