শীত মানেই হরেক রকমের পিঠাপুলি। এ সময় দেশের একেক অঞ্চলে একেক রকম পিঠা খাওয়া হয়। শীত এলে আজকাল শহরের আনাচকানাচে, সুপারমলের পাশাপাশি হোম সার্ভিসেও পিঠা পাওয়া যায়। হয় পিঠা উৎসবও।
মূলত এসব পিঠার উপকরণ হিসেবে থাকে সুগন্ধি চালের গুঁড়া, গুড়, দুধ, নারকেল, তেল, ঘি ইত্যাদি। অর্থাৎ পুষ্টিগুণে ভরপুর এসব পিঠা। সাধারণত পিঠায় কোনো প্রিজারভেটিভ, টেস্টিং সল্ট, বেকিং পাউডার, ট্রান্সফ্যাট—কিছুই থাকে না বলে বিদেশি ডেজার্ট বা কেকের তুলনায় পিঠা বেশি স্বাস্থ্যকর। তবে এগুলো ক্যালরিসমৃদ্ধ ও শর্করাবহুল।
প্রায় সব পিঠার উপকরণেই আতপ চালের গুঁড়া থাকে। এতে আছে প্রচুর শর্করা, কিছু প্রোটিন আর সামান্য ফ্যাট। এতে থাকা শর্করা শরীরে শক্তি জোগায়। আবার গুড় খনিজ, আঁশ, ক্যালরি, ভিটামিনের ভালো উৎস। খেজুর ও আখের গুড়—দুটিই বেশ উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রামে থাকে প্রায় ১৫৮ ক্যালরি।
নারকেল পিঠার আরেকটি বড় উপাদান। একটি মাঝারি আকারের নারকেলে থাকে ১ হাজার ৪০৫ ক্যালরি, পানি থাকে প্রায় ১৫০ মিলিলিটার। খনিজেরও ভালো উৎস এটি।
দুধ পিঠার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতি ১০০ গ্রাম দুধে ৬৭ কিলোক্যালরি শক্তি থাকে। প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম থাকে প্রচুর।
প্রায় সব ধরনের পিঠাতেই ৯০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ৮০ শতাংশ প্রোটিন আর ২ শতাংশ ফ্যাট থাকে। শর্করা বেশি থাকায় শরীরে শক্তির চাহিদা মেটায়। সাদা চালের গুঁড়া ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন ইত্যাদির ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে।
এ ছাড়া বাদাম ব্যবহার করা হয় অনেক দুধের পিঠার স্বাদ বৃদ্ধিতে। এতে প্রচুর খনিজ উপাদান থাকে।
ডায়াবেটিসের রোগীদের ব্যাপারে নির্দেশনা
পিঠাপুলি খাওয়ার আগে প্রথমত ডায়াবেটিসের রোগী রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, দেখে নিন। যদি অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তা নিয়ন্ত্রণে ট্যাবলেট বা ইনসুলিনের পরিমাণ চিকিৎসকের পরামর্শমতো সামঞ্জস্য করে নিন। সঙ্গে জানা দরকার, অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না। ওজন কেমন, তা-ও নজরে আনতে হবে।
চাল যেহেতু শর্করাজাতীয় খাবার, তাই ডায়াবেটিসের একজন রোগী কোনো এক বেলা শর্করা, যেমন ভাত বা রুটির বদলে পিঠা খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস থাকলে দুধ খেতে কোনো সমস্যা নেই। তাই পিঠা তৈরিতে দুধ ব্যবহার করা যাবে। চালের গুঁড়ার সঙ্গে দুধের মিশ্রণে কোনো পিঠা অনায়াসেই খেতে পারবেন।
বাকি থাকে একটি উপকরণ—গুড়/রস। গুড় চিনির মতোই রক্তে শর্করা বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিস থাকলে মিষ্টি পিঠার চেয়ে ঝাল পিঠা খাওয়াই উত্তম। যদি রক্তে সুগার খুব ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকে, নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করে থাকেন, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে চেখে দেখতেই পারেন। এ ক্ষেত্রে দিনের অন্যান্য খাবারে সামান্য কিছু যোগ-বিয়োগ করা যেতে পারে।
হাসিনা আকতার লিপি, ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ, কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড ও পার্ক ভিউ হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেড, চট্টগ্রাম