ঈদ উৎসবেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন যেভাবে
ঈদে তৃপ্তি করে খাবার তো খাবেন; কিন্তু সুস্থ থাকতে ওজনের দিকটাও খেয়াল রাখা চাই। একটানা কয়েক দিন প্রচুর খাওয়াদাওয়া করলে শরীরে জমা হবে বাড়তি ক্যালরি। আবার ছুটিছাটায় শরীরচর্চাও করা হয়ে ওঠে না অনেকের। এই দুইয়ের প্রভাবে পরবর্তী সময়ে ওজন বেড়ে যেতেই পারে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কি তাহলে রসনাবিলাসী মনকে একেবারে বন্দী করে ফেলতে হবে? আর ছুটির দিনেও করতে হবে ভারী ব্যায়াম? নিশ্চয়ই নয়। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলেই আপনি ঈদ উৎসবেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
কোনো খাবারই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয়। এসব তো জানা কথাই; কিন্তু কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন খাবারের পরিমাণ? ক্যালরির হিসাবনিকাশ ঠিক রাখতে কী করতে হবে? সুস্থ থাকতে এসব প্রশ্নেরই উত্তর জানতে হবে। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাসনোভা মাহিন এবং গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।
কম তেলে সব রান্না
তেল বা ঘি যতটা সম্ভব কম গ্রহণ করুন। অল্প তেলে রান্না সারুন। ডুবো তেলে ভাজা খাবার না খাওয়াই ভালো। রান্নায় ঘি না দিয়ে বরং রান্না নামানোর আগে সামান্য ঘি ছড়িয়ে দিতে পারেন। সুঘ্রাণ পাবেন। মাখন ব্যবহার করে কোনো পদ তৈরি করবেন না।
মাংস খাবেন বুঝেশুনে
কোরবানির ঈদে মাংস তো খাবেনই। তবে রান্নার আগে মাংসের চর্বি ফেলে দিন। রান্নার পরেও চর্বি সরিয়ে দিতে পারেন কিচেন টাওয়েলের সাহায্যে। মগজ, মাথার মাংস, মাথার হাড়, গলা, পাঁজর, মজ্জা, পায়া ও ভুঁড়ি না খাওয়াই ভালো। হাড়ের ভেতরের তেলতেলে অংশ খাবেন না। নেহারি খাবেন না। রান্না মাংস জমে গেলেও মাংসের ঝোলের জমাট তেলতেলে অংশটা সরিয়ে ফেলুন যতটা সম্ভব। এরপর গরম করে খান।
মূল খাবারের আগে দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকবেন না
নিমন্ত্রণে যান কিংবা নিজের বাড়িতেই খান, মূল খাবারের আগে লম্বা সময় খালি পেটে থাকবেন না। দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকার পর পোলাও-মাংস-বিরিয়ানির মতো মুখরোচক খাবার খুব বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলা থেকে নিজেকে বিরত রাখা মুশকিল। কোরবানির ব্যস্ততাতেও সামান্য বিরতি নিয়ে হালকা খাবার খেয়ে নিন। স্বাস্থ্যকর নাশতা বা পানীয় তৈরি করে রাখতে পারেন, ফলও খেতে পারেন।
মিষ্টান্নে সংযম
কোরবানির ঈদেও বাহারি মিষ্টান্ন তৈরি করা হয় বাড়িতে। কেউ আবার আইসক্রিমও খেতে পারেন। তবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে মিষ্টি খাবার কম খেতে হবে। আর মিষ্টান্ন তৈরিতে মধু বা কৃত্রিম চিনি ব্যবহারও কিন্তু সমাধান নয়।
মিষ্টি স্বাদের পানীয়ও নয়
কোমল পানীয় অনেকের কাছেই ঈদ উৎসবের এক অপরিহার্য অংশ। কিন্তু এসব পানীয় খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। চিনিযুক্ত কোনো পানীয় গ্রহণ না করাই ভালো।
ঈদের স্বাদে সালাদও হোক
সালাদ মানে কেবল শসা আর টমেটো মাখানোই নয়, ঈদের আয়োজনে মুখরোচক রেসিপিতে সালাদও তৈরি করুন। টক দইয়ের ড্রেসিং আর সুস্বাদু মসলা কাজে লাগাতে পারেন। পোলাও-বিরিয়ানির সঙ্গে প্রচুর সালাদ তো খাবেনই, নাশতার পদ হিসেবেও রাখতে পারেন।
সস-কেচাপ খাবেন না
ঈদে হয়তো কাবাব–জাতীয় খাবার খেতে চান; তাতে ক্ষতি নেই। তবে এ ধরনের কোনো খাবারের সঙ্গে সস ও কেচাপ–জাতীয় কিছু নেবেন না।
শর্করা রাখুন সীমিত
চাল, গম, ময়দা, আলু, বিস্কুট সবই শর্করার উৎস। ভাত-রুটি তো বটেই, নুডলস বা পাস্তাও শর্করার উৎস। পায়েসেও কিন্তু চাল থাকে। খাওয়ার টেবিলে শর্করা–জাতীয় খাবারের পরিমাণ কম রেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আমিষ–জাতীয় খাবার ও সালাদ খেলে শর্করার পরিমাণ কমানো সহজ হয়।
প্রতি বেলায়ই পোলাও-বিরিয়ানি নয়
পোলাও ও বিরিয়ানি–জাতীয় খাবার নিশ্চয়ই খাবেন। তবে উৎসবের কয়েকটা দিন প্রতিবেলাতেই এসব খাবার গ্রহণ করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কোনো বেলায় সুগন্ধি চালের ভাত খেতে পারেন মাংস দিয়ে। কোনো বেলায় খেতে পারেন লাল চালের ভাত। শাকসবজিও একেবারেই বাদ দিয়ে দেবেন না।
অন্য ব্যায়াম না হলেও হাঁটাহাঁটি চলুক
বাড়ির কাজে হাঁটুন। সকালে বা রাতে অল্প সময়ের জন্য হলেও কেবল হাঁটার জন্যই হাঁটুন খানিকটা সময়, হাঁটার জন্য আধঘণ্টা সময় বের করতে পারলে খুবই ভালো। নিমন্ত্রণে গেলেও ফেরার সময় খানিকটা পথ হাঁটতে পারেন।