নতুন পোশাক পরার আগে কি ধুয়ে নেওয়া উচিত
ঝকঝকে নতুন পোশাকে ঈদ উদ্যাপনের জন্য আপনি হয়তো প্রস্তুত। কিংবা এই কদিনের মধ্যেই হয়তো আপনার হাতে চলে আসবে ঈদের নতুন পোশাক। দোকান থেকে তৈরি পোশাক কেনাই হোক কিংবা হোক কাপড় কিনে বানানো—পরার আগে পোশাক ধুয়ে নেন না অনেকেই। ধুয়ে ফেললে নতুনত্বের ভাবটা নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে যে! তবে না ধুয়ে নতুন পোশাক পরার অভ্যাস কি আদতে স্বাস্থ্যকর?
নতুন পোশাকের ঘ্রাণ অনেকেরই পছন্দ। অবশ্য কারও কারও সেই ঘ্রাণ ভালো না-ও লাগতে পারে। ব্যক্তিগত ভালো লাগা না–লাগার চেয়ে অবশ্য স্বাস্থ্যের দিকটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভেবে দেখুন, একটা পোশাক আপনার হাতে পৌঁছানোর আগে কত হাতই না ঘুরে আসে! কাপড় তৈরি, রং করা ও সেলাইয়ের নানান ধাপ পেরিয়ে তবেই না তৈরি হয় পোশাক। সেই পোশাক সাজানো হয় ডিসপ্লেতে। ‘ফ্রেশ পিস’ নিলেও যে তা পুরোপুরি ‘ফ্রেশ’, তার নিশ্চয়তা কী? কেউ তো ওই পোশাকটি গায়ে চড়িয়ে ট্রায়ালও দিয়ে থাকতে পারেন। হয়তো মনমতো না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তা কেনেননি এক বা একাধিক ব্যক্তি। কেউ কেউ তো পোশাক কেনার কিছুদিন পরও বদলে নেন।
কিন্তু এসব কারণে কি কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়? বছরের পর বছর ধরে অনেকেই নতুন পোশাক না ধুয়ে পরেছেন, তাতে তো কোনো সমস্যা হয়নি কোনো দিন। ব্যাপারটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই অনেকে এভাবে পোশাক ব্যবহার করেন। তাহলে এই ঈদে আপনি কী করবেন? ঈদের আগে পোশাক ধুয়ে নেবেন, নাকি নেবেন না? শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান জানালেন এর উত্তর।
না ধুয়ে নতুন পোশাক পরলে যা হতে পারে
কাপড়ে নানান রকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এসবের কিছু অংশ রয়ে যেতে পারে পোশাকে। তাই পোশাক না ধুয়ে পরলে ত্বকে অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। ত্বক লালচে হয়ে যেতে পারে, চুলকাতে পারে। বিশেষত কারও যদি কোনো নির্দিষ্ট রাসায়নিকে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে সমস্যাটি প্রকট হয়ে দাঁড়াতে পারে।
হাতের স্পর্শে কাপড় ময়লা হয়। অনেকেই হাঁচি-কাশির আদবকেতা মানেন না। কেউ কেউ হাতের তালু দিয়ে হাঁচি-কাশি চাপেন, আবার কেউ কেউ মুখ বা নাকের ভেতর আটকে থাকা কিছু বের করেন হাত দিয়ে। এরপর হাত পরিষ্কার না করেই যেকোনো কাজে হাত দেন। কাপড় প্রস্তুতকরণ থেকে শুরু করে আপনার কাছে তা পৌঁছানো পর্যন্ত ঠিক কোন কোন মানুষ অপরিষ্কার হাতে তা স্পর্শ করেছেন, তা আপনি জানেন না। বুঝতেই পারছেন, আপাতদৃষ্টে ঝকঝকে পোশাকেও ময়লা এবং জীবাণু থাকতে পারে। একজনের হাত থেকে কাপড়ের মাধ্যমে বিভিন্ন জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্যজনের কাছে।
কোনো ক্রেতা পোশাকটি ট্রায়াল দিয়ে থাকলে তো কথাই নেই। তাঁর দেহের ঘাম ও জীবাণু লেগে থাকতে পারে পোশাকে। ওই ব্যক্তির ছোঁয়াচে চর্মরোগ থাকলে তাতেও আক্রান্ত হতে পারেন আপনি। এভাবে ছড়াতে পারে উকুনও।
নতুন পোশাক না ধুয়ে পরা হলে এত সব সমস্যার যেকোনোটিতেই ভুগতে হতে পারে। সবার ক্ষেত্রেই যে এমনটা ঘটে, তা নয়। তবে এক শ জনের মধ্যে একজনের সঙ্গে যদি তা ঘটে, আর সেই ব্যক্তি যদি আপনিই হন, তাহলে তো মুশকিলই বটে।
বাড়তি সতর্কতা যাঁদের জন্য
শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও বয়োজ্যেষ্ঠদের নতুন পোশাক অবশ্যই পরার আগে ধুয়ে দেবেন। তবে পরিবারের অন্যদের পোশাকও ধুয়ে নেওয়া উচিত। কারণ, ঈদে একে-অন্যকে জড়িয়ে ধরা হয়। তাই একজনের পোশাক থেকেও আক্রান্ত হতে পারেন অন্যরা।
যা করা উচিত
বুঝতেই পারছেন, নতুন পোশাক পরার আগে ধুয়ে নেওয়াই নিরাপদ। কিন্তু তাতে পোশাক ‘পুরোনো’ দেখানোর ভয় থেকেই যায়। সে ক্ষেত্রে মৃদু ডিটারজেন্ট দিয়ে নতুন পোশাক ধুয়ে নিতে পারেন। খুব বেশি ঘষবেন না। অধিক সময় ভিজিয়ে রাখবেন না। ঝটপট ধুয়েই শুকিয়ে নিন এমন জায়গায়, যেখানে কড়া রোদ নেই। মাঝারি আঁচের রোদেও বেশি সময় রাখবেন না। বরং ছায়াতেই শুকাতে পারেন কাপড়। উল্টো করে ধোয়া এবং শুকানো হলে সহজে পুরোনো ভাব আসবে না। আলাদা রঙের কাপড় আলাদাই ধোবেন। গরম পানিতে কাপড় না ধোয়াই ভালো। লেবেলে নির্দেশনা থাকলে তা মেনে চলুন। ধোয়ার পর সুন্দরভাবে ইস্ত্রি করে নিন। কিছু কাপড় ধুলে খাপে। এমন কাপড় কিনে পোশাক বানালে বানানোর আগেই কাপড় ধুয়ে নিন। বানানোর পর আবার ধোবেন।