মায়ের দুধ কেন পরিপূর্ণ খাবার

শিশুর জন্মের প্রথম ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ দেওয়া ও শাল দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করা জরুরি। ছয় মাস (১৮০ দিন) বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের দুধ খাওয়ালেই চলে। এ সময়ের পর থেকে ঘরে তৈরি বাড়তি খাবারের পাশাপাশি শিশুকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত।

ছয় মাস বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত শিশুর পুষ্টির জন্য যা প্রয়োজন, তার সব উপাদান মায়ের দুধে সঠিক পরিমাণে আছে।

মায়ের দুধ পরিপূর্ণ খাবার যেসব কারণে:

  • শিশু সহজেই মায়ের দুধ হজম করতে পারে।

  • শিশুকে বিভিন্ন রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করে।

  • শিশুর সর্বোচ্চ শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি হয়।

  • মায়ের দুধ সময়ের সঙ্গে শিশুর প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।

  • প্রচুর পানি থাকে বলে গরমকালেও শিশুকে আলাদা করে পানি দিতে হয় না।

  • মায়ের দুধে থাকা এনজাইম ‘লাইপেজ’ চর্বি হজমে সাহায্য করে।

  • মায়ের দুধ খেলে পরবর্তী জীবনে শিশুর ডায়াবেটিস, ক্যানসার, কানের প্রদাহ ও দাঁতের সমস্যা কম হয়।

মায়ের জন্যও উপকারী

জন্মের পরপর শিশুকে মায়ের দুধ দিলে মায়ের রক্তক্ষরণ কম হয়। ব্রেস্ট ফিডিং শারীরিক গড়ন আগের অবস্থায় দ্রুত ফিরতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণের কাজ করে। সন্তানের ও জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায় ব্রেস্ট ফিডিং।

ঘরে তৈরি বাড়তি খাবারের পাশাপাশি শিশুকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত।

মনস্তাত্ত্বিক উপকারিতা

ব্রেস্ট ফিডিংয়ের মাধ্যমে শিশু ও মায়ের মধ্যে একটি গভীর ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হয়; শিশু কম কান্নাকাটি করে ও মানসিকভাবে পরিতৃপ্ত থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে মায়ের দুধ খাওয়া শিশু বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় প্রক্রিয়াজাত গুঁড়া দুধ খাওয়া শিশুর চেয়ে ১০ গুণ ভালো।

অন্যান্য সুবিধা

  • মা যেকোনো সময় শিশুকে এ দুধ খাওয়াতে পারেন। এ জন্য তাঁকে কোনো বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয় না। কিনতে হয় না বলে এটি অর্থনৈতিকভাবেও সাশ্রয়ী।

  • বাইরের কোনো পাত্র, পানি বা সরঞ্জাম কিছুই প্রয়োজন হয় না। তাই জীবাণুর সংক্রমণের সুযোগ নেই।

  • মায়ের দুধে কোনো জীবাণু নেই বলে শিশুর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি খুব কম থাকে।

রোগপ্রতিরোধী উপাদান

মায়ের দুধে আছে রোগপ্রতিরোধী বহু উপাদান, যা শিশুকে বিভিন্ন সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে। এমনই কিছু উপাদান হলো:

  • জীবাণু ধ্বংসকারী জীবিত শ্বেতকণিকা।

  • ইমিউনোগ্লোবিউলিন বা অ্যান্টিবডি।

  • ‘বাইফিডাস ফ্যাক্টর’। এটি শিশুর পাকস্থলীতে ‘ল্যাকটোবেসিলাস’ বাড়াতে সাহায্য করে। ল্যাকটোবেসিলাস ক্ষতিকর জীবণু ধ্বংস করে শিশুকে ডায়রিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, পাকস্থলীতে লৌহ বেঁধে রাখতে পারে। ফলে যেসব জীবাণু লৌহ ছাড়া বাঁচতে পারে না, সেগুলো ধ্বংস হয় ও শিশু রোগমুক্ত থাকে।

শিশু মায়ের দুধ খেলে পাতলা পায়খানা, শ্বাসনালির অসুখ, এমনকি কান পাকার হারও অনেক কমে। ডায়রিয়াসহ যেকোনো অসুখের সময় শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। ফলে শিশু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।

  • ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল