নিজের অজান্তেই এই ১০ ভাবে দুশ্চিন্তার দুষ্টচক্রে আটকা পড়ছেন না তো?

আপনার পরিচিত এমন কোনো মানুষ আছে, যাঁর কোনো দুশ্চিন্তাই নেই? দুশ্চিন্তামুক্ত মানুষ খুঁজে পাওয়া ওই সুখী মানুষের শার্ট খুঁজে পাওয়ার মতোই দুরূহ। তবে কিছু অভ্যাসে নিজের অজান্তেই মানুষ আরও বেশি করে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কী সেগুলো? চলুন দেখে নেওয়া যাক।

মানুষের বিভিন্ন মানসিক সংকটে পড়ার অন্যতম কারণ হলো জীবনে শৃঙ্খলার অভাব
ছবি: পেক্সেলস

মানুষের সাইকোলজির এই দিকটা কি আপনি জানেন?

অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার বা ওসিডির একটা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো একই আশঙ্কা বা দুশ্চিন্তা মস্তিষ্কে ফিরে ফিরে আসা। মনের অজান্তেই অজানা আশঙ্কায় ডুবে ভেতরে–ভেতরে দুমড়েমুচড়ে যেতে থাকে মানুষ। এখান থেকেই তৈরি হয় অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, প্যানিক ডিজঅর্ডারের মতো জটিলতা। তবে আপনি জোর করে মন থেকে সেই আশঙ্কা বা দুশ্চিন্তা সরানোরও চেষ্টা করবেন না। মানুষের মনস্তত্ত্বের একটা দিক হচ্ছে, সচেতনভাবে যেটা মনে করতে চাইবেন না, সেটিই আপনার মনে ফিরে ফিরে আসবে। তাই দুশ্চিন্তা মন থেকে সরানোর চেষ্টা না করে বরং অন্য কিছুতে মন দেওয়ার চেষ্টা করুন। কোনো বিষয়েই মনের ওপর চাপ দেবেন না।

১. গড়িমসি

জীবনে শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই। মানুষের বিভিন্ন মানসিক সংকটে পড়ার অন্যতম কারণ হলো জীবনে শৃঙ্খলার অভাব। বিশেষ করে যখন আপনি দুশ্চিন্তা বা হতাশায় ভুগছেন, তখন আরও বেশি করে শৃঙ্খলার বিষয়টি খেয়াল রাখুন। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে যদি ঠিক সময়ে অ্যাসাইনমেন্ট জমা না দেন বা অফিসে ঠিক সময়ে না পৌঁছান, তাতে দুশ্চিন্তা আরও বাড়বে। দুশ্চিন্তার দুষ্টচক্রে আটকা পড়বেন।

২. নিজের ভয় বা আশঙ্কার পক্ষে যুক্তি খোঁজা

মনে করুন, আপনার রাতে ঘুম আসছে না। এটা নিয়ে আপনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে এই বিষয়ে গুগল করে, ইউটিউবে সার্চ দিয়ে নানা কিছু পড়াশোনা করতে থাকলেন। আর মিলিয়ে মিলিয়ে দেখলেন যে আসলেই তো, আপনার নিয়মিত ঘুম হচ্ছে না। ঘুম না হওয়ার ফলে যা যা হয়, সেসব লক্ষণও আপনার ভেতরে আছে! ঘুম নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণেই দেখা গেল আরও বেশি করে আপনার ঘুম আসছে না। এতে আপনি যেটা আশঙ্কা করছেন, সেটা ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আপনি যেটা ভয় করছেন বা আশঙ্কা করছেন, সেটার পক্ষে যুক্তি খুঁজতে যাবেন না।

৩. নেতিবাচক মানুষেরা কি আপনাকে ঘিরে থাকে?

আপনি আপনার আশপাশের সবচেয়ে কাছের পাঁচজন মানুষের গড়। হ্যাঁ, আপনার কাছের মানুষদের মাধ্যমে আপনি ঠিক এভাবেই প্রভাবিত। তাই দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে নেতিবাচক মানুষের থেকে দূরে থাকুন।

৪. নিজের সঙ্গে নেতিবাচক কথোপকথন

কখনোই ‘যদি’ দিয়ে শুরু হওয়া বাক্য নেতিবাচকভাবে শেষ করবেন না। মনে করুন, আপনার ছেলে এবার উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চলেছেন। কখনোই ভাববেন না, ‘যদি ও কোথাও সুযোগ না পায়?’ ইতিবাচক চিন্তা করুন। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মনের শতকরা ৯০ ভাগ দুশ্চিন্তাই আদতে অমূলক, কখনোই ঘটে না।

৫. হাইপারভেন্টিলেটিং

অ্যাংজাইটির কিছু শারীরিক লক্ষণ আছে। হাইপারভেন্টিলেশন একটি। এই সময় আপনি দ্রুত শ্বাস নেন, আবার দ্রুত ছেড়েও দেন। এ সময় শরীর অল্প সময়ে অনেক বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করে, আবার অনেক বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দেয়। এর ফলে বুকব্যথা, হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুত হওয়া, প্যানিক অ্যাটাকের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তাই ডিপ ব্রিদিং করুন। সময় নিয়ে শ্বাস নিন। সময় নিয়ে ছাড়ুন।

আরও পড়ুন

৬. ভয়, দুশ্চিন্তার কারণ কী?

মনে করেন এমনিতেই আপনি ভয় পান। রাতের বেলা টয়লেটে যাওয়ার সময় মনে হয়, এই বুঝি খাটের তলা থেকে কেউ একজন পা টেনে ধরল! তাহলে রাতের বেলা একা একা হরর সিনেমা দেখবেন না। আবার ধরুন, এমনিতেই আপনার সন্দেহ হয় যে কেউ আপনার ক্ষতি করতে পারে। তাহলে ইউটিউবে সেই ধরনের ‘কেস স্টাডি’ দেখবেন না। অনেকের উচ্চতাভীতি, বদ্ধতার ভীতি বা মাকড়সাভীতি আছে, সেগুলো এড়িয়ে চলুন।

৭. সকালে নাশতা না করা

কেবল সকালে নয়, যেকোনো একবেলা নাশতা না করলেই রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যাবে। তাতে অ্যাংজাইটি আরও বাড়বে।

৮. অতিরিক্ত ক্যাফেইন

এমনিতে ক্লান্তি দূর করতে চা, কফির জুড়ি নেই। কিন্তু অতিরিক্ত ক্যাফেইন আপনাকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে ফেলবে। ক্লান্ত লাগবে। আর বিষণ্নতা, হতাশা, দুশ্চিন্তা বাড়বে।

৯. নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা

কোনো ঘটনায় যদি বিষণ্ন বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে নিজেকে মানুষের ভেতর থেকে সরিয়ে একা করে ফেলেন, তাহলে আপনার দুশ্চিন্তা আরও বাড়বে। বরং প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর আপনি কাছের মানুষের সঙ্গে সময় কাটান।

১০. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানো

ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে আপনি যদি স্ক্রলিং করতেই থাকেন, এটা আপনার ভেতরকার হতাশা, দুশ্চিন্তা, একাকিত্ববোধের মানসিক সমস্যা বাড়াবে বৈ কমাবে না! নিজেকে সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত করুন।


সূত্র: কাম ক্লিনিক

আরও পড়ুন