ডায়াবেটিসের রোগীর দাঁতের যত রোগ
ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে মাড়ির প্রদাহ দেখা যায়। এই প্রদাহ বেশি হওয়ার কারণের মধ্যে রয়েছে—
১. দেহে ইনসুলিনের ঘাটতি হলে আমিষের ঘাটতি হয়। এতে কোষকলার স্বাভাবিক বৃদ্ধি, সংস্কার ও উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাই মুখের কোনো স্থানে ঘা হলে বা প্রদাহ থাকলে শুকাতে বিঘ্ন ঘটে।
২. দেহে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে আসে। এর ফলে দাঁতের গোড়ায় প্লাক জমা থাকলে সহজেই মাড়ির প্রদাহ শুরু হয়;
ডায়াবেটিসের রোগীদের দন্তক্ষয় রোগ বেশি হয়। কারণ, মুখের লালার সঙ্গে বাড়তি গ্লুকোজ জীবাণুর সঙ্গে মিলে অম্ল বা অ্যাসিড তৈরি করে। অ্যাসিড দাঁতের শক্ত আবরণ এনামেল ক্ষয় করতে থাকে। ধীরে ধীরে দাঁতে গর্তের সৃষ্টি করে। এ ছাড়া লালার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়। এতে মুখের অতিরিক্ত শুকনা পরিবেশে আহারের কণাগুলো ধুয়ে–মুছে যায় না। এসব খাদ্যকণা দীর্ঘদিন দাঁতের গায়ে ও মাড়ির ফাঁকে জমে দাঁতের ভেতরে গর্তের সৃষ্টি করে।
প্লাক
মুখে খাদ্যকণা জমে থেকে যে আবরণ সৃষ্টি হয়, তার নাম ডেন্টাল প্লাক। মুখের দুই প্রধান রোগ দন্তক্ষয় ও মাড়ির প্রদাহে ডেন্টাল প্লাকই দায়ী। এ অবস্থায় যেসব সতর্কতা জরুরি—
ক. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখাই দাঁত ও মাড়ির রোগ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
খ. প্রতি ছয় মাস অন্তর ডেন্টাল সার্জনকে দিয়ে মুখ পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
গ. প্রতিদিন দুই বেলা (সকাল ও রাতে) দাঁত মাজা এবং মাড়ির জন্য প্রয়োজন নরম টুথব্রাশ। ব্রাশটিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কার করা বিজ্ঞানসম্মত। দুই দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্যকণা বের করতে ডেন্টাল ফ্লস বা একধরনের সুতা ব্যবহার করা ভালো।
ঘ. কখনো মাড়ি থেকে দাঁত মাজার সময় বা খাওয়ার সময় রক্ত বের হলে তা মাড়িতে প্রদাহের পূর্বলক্ষণ। তখন একজন ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
ঙ. বয়স ৪০–এর বেশি এবং ওজন মাত্রাতিরিক্ত হলে কিংবা বংশে কারও ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই বছরে একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা প্রয়োজন। গর্ভবর্তীরা নিশ্চিত করবেন, তাঁদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আছে কি না।
চ. তামাক ও ধূমপানের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক ইতিমধ্যে প্রমাণিত। ধূমপান ও তামাক সেবন ডায়াবেটিসের ভয়াবহতা ও জটিলতা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসার, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও পায়ের পচনশীল রোগ গ্যাংগ্রিন হওয়ার আশঙ্কা পাঁচ গুণ বেশি। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের রোগীদের ধূমপানের কারণে ‘মাড়ির রোগ বা পেরিওডেন্টাল ডিজিজ’–এর জটিলতা বেশি হয় এবং অকালে দাঁত পড়ে যায়।
অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরী, সাম্মানিক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, ডেন্টাল সার্জারি বিভাগ, বারডেম, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ