দেশে নারীদের ক্যানসারের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসার অন্যতম। এই ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের অত্যন্ত কষ্টকর, ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগ ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। তখন চিকিৎসা করলে তেমন সুফল পাওয়া যায় না। অথচ একটু সচেতন হলেই জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধ এবং দ্রুত রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব। এ জন্য দরকার নিয়মিত স্ক্রিনিং।
স্ক্রিনিং কেন করবেন
প্রথমত জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকিতে আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে।
কোনো ধরনের উপসর্গ অনুভব করলে অবশ্যই টেস্ট করতে হবে।
ঝুঁকিমুক্ত থাকার পরও সুরক্ষা নিশ্চিতে করণীয়গুলো যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।
ঝুঁকিতে পড়ার বিষয়টি জানলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
জরায়ুমুখের ক্যানসারের লক্ষণ ও প্রাথমিক সংকেত
দুই মাসিকের মধ্যবর্তী অনিয়মিত রক্তপাত।
সহবাসের পর রক্তপাত।
মেনোপজের পরে রক্তপাত।
সহবাসের সময় অস্বস্তি বা রক্তপাত।
তীব্র গন্ধযুক্ত যোনিস্রাব।
রক্তের সঙ্গে যোনিস্রাব।
জরায়ুমুখের ক্যানসারের ঝুঁকিতে যাঁরা
অল্প বয়সে বিয়ে বা অল্প বয়সে যৌনমিলনে অভ্যস্ত হওয়া।
একাধিক যৌনসঙ্গী থাকা।
অধিক সন্তানের জন্মদান।
দীর্ঘদিন জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি ব্যবহার।
যেভাবে স্ক্রিনিং
জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের কাজটি কঠিন নয়। ৩০ বছরের যেকোনো নারী হলে তিন থেকে পাঁচ বছর পরপর একবার করে জরায়ুমুখের স্ক্রিনিং করাতে পারেন। পরীক্ষাটি অত্যন্ত সহজ এবং প্রায় সব জায়গাতেই করানো যায়। এতে কোনো জটিলতা নেই। ভায়া, প্যাপস, এইচপিভি ডিএনএ টেস্ট কিংবা কলপোস্কপি—এর যেকোনো পদ্ধতিতে স্ক্রিনিং করা যায়। একজন গাইনি ক্যানসার বিশেষজ্ঞ রোগী দেখে উপযুক্ত পদ্ধতি বাছাই করবেন।
উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, জরায়ুমুখের স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এই জটিল রোগের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যায়। প্রতিরোধের এই উপায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনভাবেই যেকোনো নারীর এগিয়ে আসা উচিত। তবে উল্লিখিত লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা দিলে দ্রুত একজন গাইনি ক্যানসার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
ফারজানা ইসলাম বীথি, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ এবং গাইনি ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, আলোক হাসপাতাল লি., মিরপুর ৬, ঢাকা।