স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ‘২-৭-৩০ পদ্ধতি’ প্রয়োগ করেছেন কখনো

ভুলে যাওয়া বা মনে রাখতে না পারার বিড়ম্বনায় আমাদের সবারই পড়তে হয়ছবি: পেক্সেলস

ভুলে যাওয়া বা মনে রাখতে না পারার বিড়ম্বনায় হয়তো আপনিও পড়েছেন কখনো না কখনো। তা সে লেখাপড়া বা পেশাগত—যে ক্ষেত্রেই হোক, কিংবা হোক গল্প-উপন্যাসের কাহিনির বেলায়। নানাবিধ কারণে মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় আজকাল অনেকের মধ্যেই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। মনে রাখার সহজ উপায়ও তাই খোঁজেন অনেকে।

সহজে মনে রাখার উপায় কী? একটা বইয়ের কথা ধরা যাক। মনোযোগ দিয়ে বারবার পড়লে বইয়ের অধিকাংশ তথ্য ভালোভাবে মনে রাখতে পারবেন আপনি। বইয়ের একটি অংশ আগে পড়া হয়ে গিয়ে থাকলে পরবর্তী অংশ শুরু করার সময় আগের পড়াটুকু একবার নিজে নিজে ঝালিয়ে নিলে তা মনে রাখা সহজ হবে। আবার এমনটাও বলা হয়ে থাকে, একবার কিছু লিখে ফেলা দশবার পড়ার সমান। অর্থাৎ কোনো বিষয় লিখলে মনে রাখা সহজ হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ! ফলে বেশি সময় দিতে হবে না, এমন কোনো উপায়ের খোঁজ তাই করতেই পারেন।

আরও পড়ুন

মনের রাখার অনেক রকম কৌশলের মধ্যে খুব সহজ এক কৌশল হিসেবে ২-৭-৩০ পদ্ধতির কথা হয়তো শুনেছেন হয়তো। কী সেই পদ্ধতি, এর বিস্তারিত জানেন কি? আর আদতেই কি এই পদ্ধতি কার্যকর? জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক

২-৭-৩০ পদ্ধতিটি যেমন

২-৭-৩০ হলো মনে রাখার এমন এক পদ্ধতি, যেখানে একটি বিষয় সম্পর্কে জানার পর নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে আপনাকে আবার সেই বিষয়টি নিজে নিজে ঝালিয়ে নিতে হবে। ধরুন, আপনি আজ একটা বই পড়লেন। মনে রাখার জন্য ২-৭-৩০ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চাইলে দুদিন পর আপনাকে বইটির মূল কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করতে হবে। আজ থেকে এক সপ্তাহ পরও আপনি একইভাবে বইটির মূলভাব ঝালিয়ে নেবেন। আজ থেকে এক মাস পর আবারও বইটি নিজে নিজে ঝালিয়ে নেবেন। ২, ৭ এবং ৩০ দিন পর নিজের মনে একটি বিষয়কে ফিরিয়ে আনার এই পদ্ধতিতে আপনার মনে সেটির স্থায়িত্ব বাড়বে।

মনের রাখার অনেক রকম কৌশলের মধ্যে খুব সহজ এক কৌশল—২-৭-৩০
ছবি: পেক্সেলস
আরও পড়ুন

কার্যকারিতার প্রশ্নে

এভাবে ২-৭-৩০ পদ্ধতি প্রয়োগ করলে আপনি যেকোনো বিষয়ের মূলভাব মনে রাখতে পারবেন। তবে অনেক খুঁটিনাটি দিকই যে আপনার মনে থাকবে না, এটাও ঠিক। একাডেমিক কিংবা পেশাগত কাজের জন্য আবশ্যক, এমন কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে অবশ্য কেবল মূলভাবটি মনে রাখা যথেষ্ট না-ও হতে পারে। সেখানে প্রয়োজন বিস্তারিত এবং খুঁটিনাটি তথ্য। সেক্ষেত্রে আপনার তাই কেবল ২-৭-৩০ পদ্ধতিতে মূলভাব ঝালিয়ে নিলে চলবে না। ২, ৭ এবং ৩০ দিন পর বিষয়টিকে আবার বিস্তারিতভাবে পড়েই মনে রাখতে হবে। প্রয়োজনে লেখাও যেতে পারে জরুরি বিষয়গুলো। তবে বহু বইয়ের বা বহু বিষয়ের মূলভাব মনে রাখার জন্য ২-৭-৩০ পদ্ধতিতে সাধারণভাবে নিজে নিজে বিষয়টি মনে করে নেওয়াই যথেষ্ট।

প্রায়োগিক সুবিধা

নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে কেবল তিনবার একটি বিষয় পুনরায় মনে করে নেওয়া খুব একটা কঠিন বা সময়সাপেক্ষ কাজ নয়। আপনি হয়তো ভাবছেন, নির্দিষ্ট সময় পর ওই বিষয়টি ঝালিয়ে নেওয়ার কথাই তো আপনার মনে থাকবে না! সেক্ষেত্রে আপনি নিজেকে এই ঝালাই করার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট দিনগুলোতে ‘রিমাইন্ডার’ দিয়ে রাখতে পারেন। যেকোনো বয়সী মানুষের জন্যই ২-৭-৩০ পদ্ধতিটি কার্যকর। তা ছাড়া ওই বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে জীবনের অন্য কোনো দিকও মনে রাখতে পারবেন আপনি। আর এভাবে আপনার স্মৃতিশক্তির উন্নতির সম্ভাবনাও বাড়বে।

আরও পড়ুন