চোখের নড়াচড়া ও স্বাভাবিক দৃষ্টির জন্য নানা নার্ভ বা স্নায়ু কাজ করে। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ক্র্যানিয়াল নার্ভ, যা মস্তিষ্ক থেকে বের হয়ে এসে চোখের সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে। এসব স্নায়ুতে সমস্যা দেখা দিলে মুখ, চোখ বা জিবের মাংসপেশি অবশ হওয়া বা পেশির নিয়ন্ত্রণ হারানোর মতো সমস্যা দেখা দেয়।
মাংসপেশিতে হঠাৎ খিঁচুনিসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। মুখের মাংসপেশির নড়াচড়ার সঙ্গে যুক্ত স্নায়ুতে সমস্যা হলে মুখের আকারের পরিবর্তন, প্যারালাইসিস, মুখ ও ঠোঁট বেঁকে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসতে, চোখ নাড়াতে ও অন্যান্য মুখভঙ্গি করতে ভীষণ অসুবিধায় পড়তে হয়।
আমাদের শরীরে ১২ জোড়া ক্র্যানিয়াল নার্ভ সরাসরি মস্তিষ্ক থেকে ফোরামেনস বা মাথার খুলির ছিদ্রের মাধ্যমে মুখের বিভিন্ন অংশে যুক্ত থাকে। চোখের মণি ও পাতার নড়াচড়ার জন্য ৩, ৫ ও ৭ নম্বর স্নায়ু বেশি জরুরি।
কারণ
ক্র্যানিয়াল নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। মুখ ও মাথায় আঘাত থেকে স্নায়ু সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কোনো অস্ত্রোপচারের সময় অসাবধানতাবশত স্নায়ুতে আঘাত লাগতে পারে। মাল্টিপল স্কলেরোসিস ও স্ট্রোক অনেক সময় স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অনেক সময় ভাইরাসজনিত সংক্রমণও দায়ী। এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কখনো কখনো এ রোগের জন্য দায়ী।
কীভাবে বুঝবেন
ডবল ভিশন বা কোনো বস্তুকে দুটি দেখা, মাথাব্যথা, চোখে কম দেখা, মুখ-চোখের পেশির অনিচ্ছাকৃত নড়াচড়া, অনুভূতি কমে যাওয়া বা মুখ-চোখের এক পাশ অবশ ভাব, চোখের পাতা পড়ে যাওয়া, চোখের মণির অসমতা, চোখে ব্যথা হওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মাংসপেশিতে খিঁচুনি বা টান ইত্যাদি এর লক্ষণ। ফেসিয়াল ল্যাসারেশন বা মুখের কোথাও জখম হলে সহজেই এ থেকে ফেসিয়াল অথবা ট্রাইজেমিনাল নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক সময় প্যারোটিড গ্রন্থি বা কানে কোনো আঘাত, অস্ত্রোপচার, সংক্রমণের কারণে স্নায়ুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
করণীয়
যেসব রোগ থেকে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেগুলোর ব্যাপারে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। রোগের শুরুতেই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হলে এ সমস্যা মানে ক্র্যানিয়াল মনোনিউরোপ্যাথি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ ছাড়া ফিজিওথেরাপি দরকার হতে পারে। রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
অধ্যাপক সৈয়দ এ কে আজাদ, চক্ষুরোগবিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন, বিভাগীয় প্রধান, চক্ষুরোগ বিভাগ, আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা