ড্রাই ফ্রুট খেলে কি ওজন বাড়ে
ড্রাই ফ্রুট অর্থাৎ শুকিয়ে নেওয়া ফল বহুদিন অবধি ভালো থাকে। একখানা বয়ামে রেখে দিলেই হলো। যখন খুশি খেয়ে নেওয়া যায়। হালকা নাশতা হিসেবেই হোক কিংবা মিষ্টান্নে যোগ করে। সুস্বাদু ড্রাই ফ্রুটে মেটে রসনার তৃপ্তি। তবে ক্যালরির হিসাব–নিকাশ বলছে, ড্রাই ফ্রুট উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার। তাহলে কি ড্রাই ফ্রুট খেলে ওজন বাড়ে?
এক কাপ টাটকা ফল থেকে যতটা ক্যালরি পাওয়া যায়, এক কাপ ড্রাই ফ্রুট থেকে আপনি তার প্রায় চার গুণ পরিমাণ ক্যালরি পাবেন। ফলের ভেতরকার পানি শুকিয়ে ফেলা হয় বলে ছোট আকারের ড্রাই ফ্রুটেই সেই ফলের পুরো ক্যালরি সঞ্চিত হয়ে থাকে। সোজাসাপটা হিসাব করলে মনে হতেই পারে, ড্রাই ফ্রুট খেলে ওজন বাড়বে। তবে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও কেউ কেউ ড্রাই ফ্রুট গ্রহণ করেন। সব ক্ষেত্রেই ওজন কমাতে ড্রাই ফ্রুট বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। তাহলে ওজনের সঙ্গে ড্রাই ফ্রুটের সম্পর্কটা আদতে কী? জানাচ্ছেন রাজধানীর আজিমপুরে অবস্থিত গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা আকতার।
যখন ওজন বাড়ার ভয়
ড্রাই ফ্রুটে ক্যালরির পরিমাণ বেশি। তাই এই খাবার বেশি পরিমাণে খেলে আপনার ওজন বাড়তেই পারে। তার ওপর যদি ড্রাই ফ্রুটকে কৃত্রিম উপায়ে মিষ্টি করা হয়ে থাকে, তাহলে তাতে ক্যালরির মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। ফলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকবে আরও বেশি। তা ছাড়া যেকোনো ড্রাই ফ্রুট খাওয়ার সময় যদি আপনি মধু, সিরাপ প্রভৃতি যোগ করে নেন কিংবা যদি আপনি কোনো মিষ্টান্নে ড্রাই ফ্রুট যোগ করেন, তাহলে কিন্তু আপনি একসঙ্গে অনেকটা বেশি ক্যালরি গ্রহণ করে ফেলবেন। এতেও আপনার ওজন বাড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে।
যখন ওজন কমাতে সহায়ক
যদি আপনি পরিমিত পরিমাণে ড্রাই ফ্রুট খান, তাহলে আবার তা ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকাও রাখতে পারে। ধরুন, আপনি নাশতা হিসেবে ড্রাই ফ্রুট খেলেন। তাতে আপনার ক্ষুধা মিটবে। স্বাদ তো পাবেনই। এতে বেশ খানিকটা আঁশ থাকে। তাই লম্বা সময় পর্যন্ত আপনার ক্ষুধা পাবে না। ফলে অন্যান্য উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ইচ্ছাটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। কর্মক্ষেত্রে সব সময় তাজা ফলমূল আনা সম্ভব না হলেও এক বয়াম ড্রাই ফ্রুট রেখে দিতে পারবেন অনায়াসেই। কখনো কখনো সুস্বাদু ড্রাই ফ্রুট খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করাটাকে অতিরিক্ত কষ্টদায়ক ব্যাপার বলে মনেও হবে না। আর প্রয়োজনীয় কিছু খনিজ উপাদানও পেয়ে যাবেন ড্রাই ফ্রুট থেকে। খেজুর ও কিশমিশে মিলবে আয়রন। তা ছাড়া ড্রাই ফ্রুটের সঙ্গে বাদাম থাকলে তা থেকে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড আর খানিকটা আমিষও পাবেন। তবে রোস্টেড বা ভাজা বাদামে অবশ্য ক্ষতিকর স্নেহ পদার্থ থাকতে পারে। তাতে ক্যালরিও বেড়ে যাবে। তাই রোস্টেড বাদাম এড়িয়ে চলুন। টেস্টিং সল্ট দেওয়া থাকলে সেটিও অস্বাস্থ্যকর।
শেষ কথা
বুঝতেই পারছেন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে আপনি যে পরিমাণ তাজা ফল খেতে পারবেন, ড্রাই ফ্রুট ততটা খেতে পারবেন না। এতে বাড়তি চিনি বা মিষ্টিজাতীয় উপকরণ যোগ করাও যাবে না। তবে মাঝেমধ্যে নাশতা হিসেবে খানিকটা ড্রাই ফ্রুট খেতেই পারেন। খাওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন, যেন পরিমাণটা বেশি হয়ে না যায়। আপনি হয়তো কেবল এক চা–চামচ ড্রাই ফ্রুট খাবেন। খাওয়ার সময় অবশ্যই মনে রাখবেন, পরিমাণে তা বেশি না হলেও আপনার দেহে ক্যালরি জোগাবে বেশ। সময় নিয়ে অল্প অল্প করে চিবিয়ে খাবেন। স্বাদটা উপভোগ করবেন। নইলে আপনার মনে হতে পারে, আমি তো কেবল এক চা–চামচ খাবার খেলাম! তখন মনের তাড়নায় আপনি একটু পরই অন্য কিছু খেতে উদ্যত হবেন হয়তো। এভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণের দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে পারেন আপনি। তবে কিনতে চাইলে অবশ্যই মানসম্মত ড্রাই ফ্রুট বেছে নিন। কারণ, ড্রাই ফ্রুট দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশিয়ে বিক্রি করা হতে পারে।