বয়স ৩০ পেরোলে যে ৫টি উপকার পেতে ঢ্যাঁড়স–পানি খাবেন
৩০ বছর বয়স মানুষের জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ত্রিশের পর থেকেই মূলত নারী ও পুরুষের স্বাস্থ্যগত নানান সমস্যা সামনে আসতে থাকে। তাই এ সময় ঢ্যাঁড়স–পানি হতে পারে ভালো ‘টনিক’। জেনে রাখুন বিস্তারিত...
ডায়াবেটিস দূরে রাখে
৩০ বা তার বেশি বয়সীদের জন্য ডায়াবেটিস চিন্তার বিষয় বটে। ডায়াবেটিস হলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে ঢ্যাঁড়স–পানি দারুণ উপকারী। এতে পাবেন দ্রবণীয় আঁশ, যা অন্ত্রে শর্করার শোষণ ধীরগতির করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। ‘ফার্মাসিউটিক্যাল বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢ্যাঁড়সের বীজ এবং এর আবরণে অ্যান্টিডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য আছে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়।
হজমের সমস্যা দূর করে
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হজমের সমস্যা দেখা দেয় অনেকের ক্ষেত্রে। এ কারণে ভুগতে হয় কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা বদহজমের মতো সমস্যায়। নিয়মিত ঢ্যাঁড়স–পানি খেলে এমন সমস্যায় স্বস্তি পাবেন। ঢ্যাঁড়সে মিউকিলেজ বা সাইলিয়াম নামে থিকথিকে একধরনের উপাদান থাকে, যা পরিপাকতন্ত্রে আরাম দেয়। এই মিউকিলেজ খাবার হজমে সহায়ক বলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। ‘জার্নাল অব ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢ্যাঁড়সের মিউকিলেজ অন্ত্রে প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করে।
ইমিউনিটি বাড়াতে সহায়তা করে
ইমিউনিটি, সোজা বাংলায় রোগসংক্রমণ থেকে শরীরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে সুস্থ থাকার জন্য এই ইমিউনিটি ভালো হওয়া জরুরি। ঢ্যাঁড়স–পানি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ঢ্যাঁড়সে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। বিশেষ করে ভিটামিন সি ও ফ্ল্যাভোনয়েড, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। ‘নিউট্রিয়েন্টস’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢ্যাঁড়সে বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ কমাতে সাহায্য করে। প্রশ্ন হলো, এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কী? সহজ করে বললে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস মানে শরীরে ‘ফ্রি র্যাডিক্যাল’–এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। ফ্রি র্যাডিক্যাল আমাদের শরীরে রক্ত এবং অন্যান্য তরল পদার্থের সঙ্গে প্রবাহিত হয়। এই উপাদান আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অর্থাৎ শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যাল এবং অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে ত্বক, কোষ এবং টিস্যুতে যে স্ট্রেস তৈরি হয়, তাকে বলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস।
হৃদ্রোগ দূর করে
বয়স ৩০ পেরোলে হৃৎস্বাস্থ্য ভালো রাখা খুব জরুরি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ে। ঢ্যাঁড়স–পানি হৃৎস্বাস্থ্যের জন্যও বেশ উপকারী। ঢ্যাঁড়সে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ‘আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ ফাইবারযুক্ত ঢ্যাঁড়স খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা (এলডিএল) উল্লেখযোগ্য হারে কমায়। পাশাপাশি হৃদ্রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও হ্রাস করে। এ ছাড়া ঢ্যাঁড়সের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ধমনিতে ‘প্লাক’ জমতে বাধা দেয়। এই প্লাক হার্ট অ্যাটাকের একটি অন্যতম কারণ।
হাড় ভালো রাখে
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় হারাতে থাকে ঘনত্ব ও শক্তি। বাড়তে থাকে ফ্র্যাকচার এবং অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি। ঢ্যাঁড়স–পানি হাড় মজবুত রাখতে ভূমিকা রাখে। ঢ্যাঁড়সে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। ‘বোন রিপোর্টস’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন কে হাড়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঢ্যাঁড়স–পানি খেলে হাড়ের ঘনত্ব বজায় থাকে এবং হাড়-সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ঢ্যাঁড়স–পানি বানাবেন যেভাবে
ঢ্যাঁড়স–পানি বানানো খুব সহজ। নিয়মগুলো দেখে নিন—
৪-৫টি তাজা ঢ্যাঁড়স ভালো করে ধুয়ে নিন, যাতে কোনো ময়লা বা কীটনাশক না থাকে।
ঢ্যাঁড়সগুলো কেটে ছোট ছোট টুকরা করুন।
টুকরাগুলো এক গ্লাস পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন।
সকালে পানি ছেঁকে নিন।
খালি পেটে ঢ্যাঁড়স–পানি খাওয়া ভালো। প্রথমে অল্প অল্প করে শুরু করুন। এতে শরীরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া