এইচজিএইচ ইনজেকশনে কি উচ্চতা বাড়ে
ডায়েট, ব্যায়াম ও ওজন কমানো–বাড়ানো নিয়ে পাঠকদের নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ
প্রশ্ন: আমি একজন নারী। বয়স ১৬ বছর, ওজন ৪৭ কেজি, উচ্চতা ৫ ফুট। আমি আরও ৫ ইঞ্চি লম্বা হতে চাই, সেই সঙ্গে ওজনও কমাতে চাই। লম্বা হওয়ার জন্য কি কোনো ওষুধ বা ইনজেকশন আছে। শুনেছি, লম্বা হওয়ার জন্য এইচজিএইচ নামে একটা ইনজেকশন আছে, সেটা কি ঠিক? আমার এখন করণীয় কী জানাবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার বয়স এখন ১৬ বছর। তার মানে আপনার উচ্চতার প্রায় ৯৫ ভাগই আপনি অর্জন করে ফেলেছেন। কারণ, মেয়েদের সাধারণত ১৪-১৫ বছর বয়স পর্যন্ত উচ্চতা বাড়তে থাকে আর ছেলেদের ক্ষেত্রে উচ্চতা বাড়ার বয়স ১৬-১৮ বছর। বয়ঃসন্ধিকালে উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য মূল বিষয় হলো গ্রোথ হরমোন। যাকে হিউম্যান গ্রোথ হরমোন (এইচজিএইচ) বলা হয়। এই হরমোন ৯-১১ বছর বয়সে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। এরপর এই হরমোনের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অন্যদিকে শরীরের দীর্ঘ হাড়ের প্রান্তের কাছে থাকে গ্রোথ প্লেট, যা উচ্চতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে বয়ঃসন্ধিতে এসে এই গ্রোথ প্লেটগুলো বন্ধ হয়ে যায়, আর গ্রোথ প্লেট বন্ধ হয়ে গেলে এইচজিএইচ আর লম্বা করতে পারে না।
মানুষের শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধি মূলত তিনটি মূল বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। সেগুলো হলো বংশগত, শৈশবকালীন খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক পরিশ্রম। তাই কিছু বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে—
১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস: দৈহিক উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভারসাম্য রেখে খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা শুরু করতে হয় জন্মের পর থেকেই। প্রথম ৬ মাস শুধুই বুকের দুধ, ৭ মাস থেকে সঠিক পরিমাণে ও আনুপাতিক সমতা ঠিক রেখে কমপ্লিমেন্টারি খাবার খাওয়ানো, শিশুর প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের সরবরাহসহ ক্যালরি চাহিদা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিশুদের বয়স অনুপাতে লম্বা হওয়ার জন্য প্রতিদিন স্বাস্থ্যসম্মত খাবার রাখতে হবে। কারণ, তা শরীরের চর্বি ও ইনসুলিন হরমোনের মাত্রা বিচার করে এইচজিএইচের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। আবার প্রচুর পরিমাণে চর্বিযুক্ত প্রোটিন, বিশেষ করে ট্রপটোফান ও মেলাটোনিন–সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, মটরশুঁটি, সয়া ও বাদামের মতো খাবার খাওয়ার পাশাপাশি সূর্যের আলোতে যেতে হবে। এতে শরীরে এইচজিএইচের মাত্রা বাড়িয়ে পেশি ও হাড়ের বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি চিনিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে। কারণ, চিনিজাতীয় খাবার ইনসুলিন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে যদি রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কম থাকে, তাহলে রাতে এইচজিএইচ হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা উচ্চতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২. শারীরিক পরিশ্রম: উচ্চতা বাড়াতে চাইলে পেটের পেশি শক্ত করতে নিয়মিত কোর এক্সারসাইজ যেমন ক্রাঞ্চ, প্ল্যাঙ্ক ও স্ট্রেচিং করুন। কারণ, কোর মাসল শক্ত হলে লম্বা দেখায়। নিয়মিত খেলাধুলা, সাইকেল চালানোর মতো অভ্যাসেও শারীরিক পরিশ্রম হয়।
৩. পর্যাপ্ত ঘুম: বয়ঃসন্ধিতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম (৮-৯ ঘণ্টা) খুবই জরুরি। কারণ, মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে এইচজিএইচের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়।
৪. মানসিক চাপ: মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা উচ্চতা বাড়ানোর হরমোন তৈরিতে বাধা দেয়। তাই এ বয়সে আনন্দে থাকা জরুরি। শিশুকে মানসিক চাপমুক্ত রাখতে পারলে সেটা তার বেড়ে ওঠায় সাহায্য করে।
যাদের উচ্চতা বৃদ্ধির বয়সসীমা পার হয়ে গেছে, তাঁরা একই উচ্চতায় থেকেও কিছুটা লম্বা দেখাতে বসা ও দাঁড়ানোর ধরন কিছুটা বদল আনতে পারেন। যেমন কখনো ঝুঁকে দাঁড়ানো যাবে না। হাঁটার সময়ও ঝুঁকে যাবেন না। কারণ, দাঁড়ানো বা বসার ভঙ্গির কারণে আমাদের অনেকের মেরুদণ্ড, ঘাড় ও কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে যায়, ফলে উচ্চতা কম দেখায়। নিয়মিত ঘাড়, কাঁধ, মেরুদণ্ডের স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করতে থাকুন, যা আপনাকে লম্বা দেখাতে সাহায্য করবে।
আর এইচজিএইচ হরমোন ইনজেকশন আছে। তবে সেটা নিতে চাইলে অবশ্যই একজন হরমোন রোগবিশেষজ্ঞের (এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট) পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, অতিরিক্ত হরমোন শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করে। অনেক সময় হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শমতো হরমোনের ডোজ, সময়, কত দিন নিতে হবে, তা সম্পূর্ণভাবে জেনে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।
ই–মেইল ঠিকানা: [email protected]
(সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা,
প্রথম আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’), ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA