ফ্যানের বাতাস কি স্বাস্থ্যকর

ফ্যান এমনই এক প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ, যা এ দেশের অধিকাংশ বাড়িতেই রয়েছে। তা সে সিলিং ফ্যানই হোক কিংবা হোক টেবিল ফ্যান বা স্ট্যান্ড ফ্যান। বহু বাড়িতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থাকলেও ফ্যানের কদর কমেনি। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ঠান্ডা হাওয়া পুরো ঘরে ছড়িয়ে দিতেও তো কাজে লাগে ফ্যান। তাই অধিকাংশ বাড়ির অন্দরের জন্য গরমকালের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ বলা যেতে পারে একে। কিন্তু বহুল ব্যবহৃত এই ফ্যান কি আদতে স্বাস্থ্যকর?

রাজ্যের ধুলাময়লা আটকে থাকা ফ্যান চালানো হলে বাতাসের মাধ্যমে সেসব ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা অন্দরে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ফ্যানের পাখার সঞ্চালনে অন্দরের বাতাস আলোড়িত হয়। ঠান্ডা হাওয়ার পরশে ক্লান্ত দেহ জুড়ায়। কিন্তু সরাসরি ফ্যানের ঠান্ডা বাতাসের প্রবাহে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে ফ্যানের বাতাসের জন্য যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলো নিতান্তই সাধারণ। তা ছাড়া কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে এই সমস্যাগুলো এড়ানো যায় অনায়াসেই। এ বিষয়ে জানালেন ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান।

আরও পড়ুন

যে সমস্যা হতে পারে ফ্যানের বাতাস থেকে

  • গরমের সময় সরাসরি ফ্যানের নিচে থাকলেই বেশি আরাম লাগবে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু ফ্যানের ঠিক নিচেই যদি আপনি লম্বা সময়ের জন্য থাকেন, সে ক্ষেত্রে আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে। চোখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে যাওয়ার ফলে চোখে খচখচে একটা অনুভূতি হতে পারে। নাক-মুখের ভেতরের স্বাভাবিক আর্দ্রতাও নষ্ট হতে পারে। গলা খুসখুস করতে পারে। হাঁচি বা সর্দি-কাশি হতে পারে। ঘন কফও নিঃসৃত হতে পারে।

  • স্বাস্থ্যের দিক থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফ্যানের গায়ে আটকে যাওয়া ময়লা। রাজ্যের ধুলাময়লা আটকে থাকা ফ্যান চালানো হলে বাতাসের মাধ্যমে সেসব ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা অন্দরে। এসবের কারণেও হাঁচি বা সর্দি-কাশি হতে পারে। নাক সুড়সুড় কিংবা গলা খুসখুসের মতো অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে।

  • ময়লা ফ্যান পরিষ্কার করার সময়ও ধুলাবালি ঢুকে যেতে পারে শ্বাসতন্ত্রে। এমনকি তা ছড়িয়ে পড়তে পারে ঘরের অন্যান্য স্থান আর আসবাবেও। এমন ক্ষেত্রেও হতে পারে ধুলাজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা। ফ্যান পরিষ্কার করার সময় খাবারের পাত্রে ময়লা পড়লে সেখান থেকে হতে পারে পেটের পীড়া।

আরও পড়ুন

যেভাবে নিরাপদ থাকবেন

ফ্যান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাও জরুরি। আর এই কাজ করতে হবে খুবই সতর্কতার সঙ্গে। নইলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়বে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
  • বুঝতেই পারছেন, সরাসরি ফ্যানের বাতাসে লম্বা সময়ের জন্য থাকা ভালো নয়। বিছানা, সোফা, চেয়ার প্রভৃতির অবস্থান হওয়া উচিত ফ্যান থেকে খানিকটা দূরে। গরমে অনেকে মেঝেতে শুয়ে পড়েন, ঠিক ফ্যান বরাবর। এ ক্ষেত্রেও ফ্যানের সঙ্গে দূরত্বের বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত। কেউ কেউ আবার খুব গরমে মাথার কাছে একটা টেবিল ফ্যান বা স্ট্যান্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করেন। এ ব্যবস্থাও আদতে স্বাস্থ্যকর নয়। বরং মাথার দিক থেকে একটু দূরে রাখা উচিত এসব ফ্যান।

  • অন্দরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা হলে শুষ্কতাজনিত সমস্যার ঝুঁকি কমে যায়। তা ছাড়া ত্বকে গরমের সময়কার উপযোগী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ফ্যানের বাতাসেও ত্বক থাকবে প্রাণবন্ত। চোখের সুরক্ষায় খেয়াল রাখতে হবে, কাজের ফাঁকে যেন মাঝেমধ্যে পলক ফেলা হয়। তাহলে চোখের শুষ্কতার ঝুঁকি কমবে।

  • ফ্যান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাও জরুরি। আর এই কাজ করতে হবে খুবই সতর্কতার সঙ্গে। নইলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়বে। ফ্যান পরিষ্কারের সময় মাস্ক পরে নেওয়া উচিত। তা ছাড়া ঘরের সব আসবাব পুরু কাপড়ে ঢেকেও দিতে হবে ফ্যান পরিষ্কার করার আগে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেষে ফ্যান চালানোর আগে এগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে, ঘরের মেঝেও পরিষ্কার করে নিতে হবে। তবে ঝক্কি অনেকটাই কমবে যদি পুরোনো বালিশের কভারে ফ্যানের ব্লেড মুড়িয়ে নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রথম ধাপটি সেরে নেন। এ ক্ষেত্রে কভারের ভেতরের অংশ দিয়েই পরিষ্কার করা হয়ে যাবে ফ্যানের অধিকাংশ ময়লা। তার ফলে ফ্যানের এই ময়লা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক কমে যাবে।

আরও পড়ুন