দেহভঙ্গিমার ত্রুটির কারণে মেরুদণ্ডের সমস্যা হওয়া খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। একে বলা হয় পোশ্চারাল ডিফরমিটি। কর্মস্থলে সঠিকভাবে বসে কাজ না করায় কোমরে ব্যথা হতে পারে। চেয়ারের কাঠামোগত ত্রুটির জন্যও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্কুলগামী শিক্ষার্থী থেকে বয়োবৃদ্ধ—যাঁরা দীর্ঘ সময় চেয়ারে বসেন বা সামনে ঝুঁকে কাজ করেন, তাঁরা সহজেই এ ধরনের ব্যথায় আক্রান্ত হতে
পারেন। মেরুদণ্ড সম্পর্কে সচেতনতা ও সঠিক জীবনযাপনের অভাব এ জন্য দায়ী।
কারণ
দৈহিক অস্বাভাবিকতার (বিকৃতি) জন্য মেরুদণ্ডের পেশি ও লিগামেন্টে হঠাৎ টান বা চাপ পড়া।
সঠিকভাবে না বসার কারণে মেরুদণ্ডের হাড়গুলোর বক্রতার পরিবর্তন।
কোমরের ভারসাম্যহীনতার জন্য ডিস্কজনিত সমস্যা—ডিস্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ, ডিস্কের স্থানচ্যুতি।
উপসর্গ
কোমর ও নিতম্বে ব্যথা। কোমর থেকে পায়ে ঝিঁঝিঁ করা। কিছু ক্ষেত্রে অনুভূতি কমে যাওয়া ও দুর্বলতা দেখা দেওয়া।
কারা ঝুঁকিতে
অফিস কিংবা বাড়িতে যাঁরা সারাক্ষণ বসে কাজ করেন।
সমাধান
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের ব্যথার পেছনে কোনো গুরুতর কারণ বা রোগ নেই। সহজেই এর সমাধান করা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। বরং এ জন্য সঠিক দেহভঙ্গিমা জেনে সে অনুযায়ী কর্মস্থলে কাজ করা এবং প্রয়োজনে দেহভঙ্গি পরিবর্তন করা দরকার। নিয়মিত শারীরচর্চায় অনেকাংশেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
প্রতিরোধ
সঠিক দেহভঙ্গি ও সুস্থ জীবনধারা মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাবারেরও প্রয়োজন রয়েছে।
শক্ত, সমান বিছানা, পাতলা তোশক, এক বালিশে শোবেন।
টানা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা পরিহার করুন। মাঝেমধ্যে উঠে হাঁটাচলা করুন।
কোমর সোজা রেখে চেয়ারে বসুন। প্রয়োজনে কোমরের পেছনে সাপোর্ট—ভাঁজ করা তোয়ালে, ছোট বালিশ ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করবেন না।
কম হিলের আরামদায়ক জুতা পরুন।
ভারী কাজে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন।
প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলোয় থাকুন।
তামাক, অ্যালকোহল পরিহার করুন।
ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও বিভিন্ন খনিজসমৃদ্ধ খাবার খাবেন।
প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ, আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর ৬, ঢাকা