শিশুর যকৃতের প্রদাহ

যকৃতের প্রতীকী ছবি

শিশুদের লিভার বা যকৃতের নানা রোগের মধ্যে হেপাটাইটিস বা যকৃতের প্রদাহ অন্যতম। হেপাটাইটিস হলে জন্ডিস হয়। মনে রাখবেন, জন্ডিস কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে জন্ডিস হয়। এতে চোখ, প্রস্রাব, জিব হলুদ হয়।

হেপাটাইটিস বা যকৃতের প্রদাহ দুই ধরনের—ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী। ভাইরাস ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’ ও ‘ই’ দিয়ে মূলত হেপাটাইটিস ছড়ায়। এর মধ্যে ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস ক্ষণস্থায়ী হেপাটাইটিসের জন্য দায়ী। এরা দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। অন্যদিকে ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস সংক্রমিত হয় রক্ত ও দেহরসের মাধ্যমে। ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৫০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে। ‘সি’ ভাইরাসের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের হার ৫০ থেকে ৮০ হতে পারে।

লক্ষণ: হেপাটাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের লক্ষণ বড়দের মতোই। পেটে ব্যথা, বমি ভাব, অরুচি, দুর্বলতা, অল্প জ্বর, চুলকানি ইত্যাদি। সমস্যা জটিল হলে পেট ফোলা, রক্তবমি, আলকাতরার মতো কালো পায়খানা, এমনকি অজ্ঞানও হতে পারে।

পরীক্ষা: রক্তে বিলিরুবিনের পাশাপাশি লিভার এনজাইমের মাত্রা দেখার প্রয়োজন হয়। শিশুটি কোন ভাইরাসে আক্রান্ত, তা বুঝতে রক্তের আলাদা পরীক্ষা করতে হয়। রোগের তীব্রতা বুঝতে রক্তের প্রোথমবিন টাইম ও অ্যালবুমিন পরীক্ষা করা হয়। রক্তের অ্যামোনিয়া পরিমাপ করে শিশুর অজ্ঞান হওয়ার ঝুঁকির ধারণা পাওয়া যায়। খাদ্যনালির এন্ডোস্কপি ও পেটের আলট্রাসনোগ্রামও দরকার হতে পারে। এমনকি যকৃতের অবস্থা জানতে বায়োপসি পরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসা: শিশুকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। পর্যাপ্ত প্রোটিনের সঙ্গে ফলমূল দেওয়া যাবে। অল্প লবণের রান্না করা খাবারের সঙ্গে পরিমিত পানি শিশুর পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে। এ সময় হলুদ ছাড়া রান্না, ডাবের পানি, আখের রস, শিং মাছের ঝোল—এসব খাবারের বিশেষ কোনো ভূমিকা নেই। এগুলো কুসংস্কারমাত্র। পুষ্টির মাত্রা বজায় রেখে সুষম খাবার খাওয়ালে, সঙ্গে সংক্রমণ ও রক্তপাত ঠেকাতে পারলে যকৃতের কোষগুলো সংগঠিত হয়ে কাজ শুরু করে।

নিয়মিত পায়খানার জন্য ল্যাকটুলোজ সিরাপ ব্যবহার করা যায়। যকৃৎ রক্ত জমাট বাঁধার প্রভাবক ভিটামিন কে তৈরি করতে না পারলে ভিটামিন কে ইনজেকশন দেওয়া হয়। পেটে পানি এলে, শরীর ফুলে গেলে পানি বের করার বড়ি দেওয়া হয়, সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিসের জন্য ইন্টারফেরন ইনজেকশন দেওয়া যায়।

হাসপাতালে ভর্তি: শিশুর বারবার বমি হলে, রক্তে বিলিরুবিন খুব বেড়ে গেলে, চিনি ও পটাশিয়ামের মাত্রা কমে গেলে, অজ্ঞান হয়ে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

পরিণতি: ক্ষণস্থায়ী যকৃৎ রোগে ৯৯ শতাংশ শিশু সুস্থ হয়, মৃত্যুর ঝুঁকি খুবই কম। অন্যদিকে দীর্ঘস্থায়ী যকৃৎ রোগে আক্রান্ত সবার সময়মতো চিকিৎসা করলে সিরোসিসের হাত থেকে রক্ষা করা যায়।

প্রতিরোধ: প্রধান উপায় হলো টিকা নেওয়া। তাই হেপাটাইটিস ‘এ’এবং হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের টিকা নিতে হবে।

  • অধ্যাপক ডা. ইমনুল ইসলাম, শিশু বিভাগের প্রধান, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড, ঢাকা