আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে চলেছেন, কীভাবে বুঝবেন

প্রি–ডায়াবেটিস মানে ডায়াবেটিসের পূর্বাবস্থা। অনেকে একে বলেন বর্ডার লাইন ডায়াবেটিস। এ অবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, কেউ যে প্রি–ডায়াবেটিস পর্যায়ে আছেন, তা পরীক্ষা ছাড়া এমনিতে বোঝা মুশকিল।

কেউ যে প্রি–ডায়াবেটিস পর্যায়ে আছেন, তা পরীক্ষা ছাড়া এমনিতে বোঝা মুশকিলছবি: পেক্সেলস

২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, দুনিয়ায় প্রায় ৭২ কোটি মানুষ প্রি–ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় জানা গেছে, ৮০ শতাংশই জানেন না যে তাদের প্রি–ডায়াবেটিস আছে। কোনো উপসর্গ না হওয়ায়, অধিকাংশের ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষা ছাড়া এটি চিহ্নিত করা যায় না। তবে আগেই নির্ণয় করা গেলে ডায়াবেটিস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।

প্রি–ডায়াবেটিস কী

সুস্থ–স্বাভাবিক একজনের রক্তে একটা নির্দিষ্ট মাত্রার গ্লুকোজ বা শর্করা থাকে। গাইডলাইন অনুযায়ী, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা একটা নির্দিষ্ট ধাপ অতিক্রম করলে তাকে বলে ডায়াবেটিস। এই দুইয়ের মাঝামাঝি অবস্থাকে বলা হয় প্রি–ডায়াবেটিস। তার মানে যখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ের থেকে বেশি হয়, কিন্তু ডায়াবেটিসের নির্ধারিত মাত্রায় পৌঁছায় না, সে পর্যায়কে বলে প্রি–ডায়াবেটিস।

খাদ্যাভ্যাস, দৈনন্দিন জীবনধারা, বংশগত ত্রুটি, স্থূলতা—এসব কারণেই মূলত প্রি–ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এসব কারণে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায়। ইনসুলিন আমাদের রক্তের গ্লুকোজকে স্বাভাবিক রাখে। এ ক্ষেত্রে ইনসুলিন থাকার পরও শরীরের অতিরিক্ত মেদ ইনসুলিনকে অকার্যকর করে রাখে।

আশার ব্যাপার হলো, প্রি–ডায়াবেটিস পর্যায়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে, যেমন খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, ব্যায়াম ও হাঁটাচলার অভ্যাস গড়ে তুললে এটি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়।

আরও পড়ুন

প্রি–ডায়াবেটিস নির্ণয়

কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রি–ডায়াবেটিস নির্ণয় করা যায়। যেমন—

১. HbA1c পরীক্ষা

এটি এমন এক পরীক্ষা, যেটিতে বিগত দু-তিন মাসের গড় রক্তের গ্লুকোজ ইঙ্গিত করে। এর মাত্রা ৫.৭–৬.৪ শতাংশের মধ্যে হলে একে প্রি–ডায়াবেটিস বলা যায়।

২. খালি পেটে রক্তের গ্লুকোজ

আগের রাত থেকে খালি পেটে থেকে সকালে রক্তের গ্লুকোজ সুগার দেখা হয় এতে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৬.১–৭.০ মিলিমোলের মধ্যে হলে প্রি–ডায়াবেটিস হিসেবে ধরা হয়।

৩. গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট

এতে গ্লুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর গ্লুকোজের মাত্রা দেখা হয়। ৭.৮–১১.১–র মধ্যে থাকলে তা প্রি–ডায়াবেটিস হিসেবে বিবেচ্য।

উপসর্গ

সবচেয়ে উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো প্রি–ডায়াবেটিসে বেশির ভাগ সময় কোনো উপসর্গই থাকে না। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যেতে পারে। যেমন—

  • ঘন ঘন পিপাসা ও প্রস্রাব।

  • দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ।

  • চোখে ঝাপসা দেখা।

  • ওজনে পরিবর্তন (হ্রাস বা বৃদ্ধি)।

এ রকম কোনো লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরও পড়ুন

প্রি–ডায়াবেটিসে খাদ্যাভ্যাসে যেসব পরিবর্তন আনা উচিত

  • প্রোটিন–জাতীয় খাবার, যেমন মুরগির মাংস, ডিম, মাছ বেশি করে খেতে হবে।

  • শাকসবজি বেশি করে খেতে হবে। স্টার্চ–জাতীয় সবজি, যেমন আলু কম খেতে হবে বা পরিহার করতে হবে।

  • বাদাম, অলিভ ওয়েলের মতো তেল বা তেল–জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।

  • চিনি–জাতীয় খাবার, যেমন সোডা, মিষ্টান্ন খাবার কম খাওয়া উচিত।

  • সাদা ভাত, সাদা পাউরুটি , সাদা পাস্তার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি, মানে এসব গ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় খুব দ্রুত।

ওজন কমানো

ওজন কমানো প্রি–ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। ওজন বেড়ে গেলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। ওজন কমালে মেদ কমে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়।

হাঁটাচলা ও শরীরচর্চা

গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট বা তার বেশি হাঁটলে ও শরীরচর্চা করলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

ওষুধ

প্রয়োজন মনে করলে চিকিৎসকের পরামর্শে মেটফরমিন প্রি–ডায়াবেটিস পর্যায় থেকে ব্যবহার করা যায়। সেমাগ্লুটাইড বা জিএলপি ওয়ান এগোনিস্ট ব্যবহার করা হয় যাঁদের ওজন কমানো জরুরি।

ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা

আরও পড়ুন