যেসব খাবারে ভারী ধাতু আছে, সেসব খাওয়ার আগে কী করবেন
সম্প্রতি বেশ কিছু শাকসবজি, ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে ভারী ধাতু পাওয়ার খবর এসেছে। খাবারে ভারী ধাতু থাকতেই পারে, সেটা সহনীয় মাত্রায় হলে ক্ষতি নেই। কিন্তু সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে ভারী ধাতুযুক্ত ফলমূল, শাকসবজি খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়।
যেসব খাবারে অতিরিক্ত ভারী ধাতু
একাধিক গবেষণায় ৭৫ শতাংশে সহনীয় মাত্রার দ্বিগুণের বেশি সিসা পেয়েছেন গবেষকেরা। ১০ শতাংশ বেগুনে ভারী ধাতু ক্যাডমিয়াম সহনীয় মাত্রার চেয়ে চার গুণ বেশি পাওয়া গেছে। ওই বেগুন যেখানে উৎপাদিত হয়েছে, সেখানকার মাটিতে সিসা, ক্যাডমিয়াম, তামা ও দস্তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। সর্বোচ্চ অনুমোদিত মাত্রার (ম্যাক্সিমাম পার্মিসিবল লিমিট বা এমপিএল) চেয়ে বেশি পরিমাণে দস্তা, তামা, সিসা ও লোহা পাওয়া গেছে ডিমে। গবেষণায় ডিমে ১০টি ভারী ধাতুর উপস্থিতি মিলেছে। এর মধ্যে ছয়টি ধাতুর উপস্থিতি সর্বোচ্চ অনুমোদিত মাত্রার (এমপিএল) মধ্যে রয়েছে। বাকি চারটি (দস্তা, তামা, সিসা ও লৌহ) ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে এমপিএলের চেয়ে বেশি।
শাকসবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভারী ধাতু পাওয়া গেছে লালশাকে। ফলের মধ্যে লিচুতে পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি। শিম, শসা, ঢ্যাঁড়স, পটোল ও লালশাকে ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর লেডের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে বেগুন, বাঁধাকপি, শিম, শসা, ঢ্যাঁড়স, পটোল, টমেটো ও লালশাকে।
মাত্রাতিরিক্ত ভারী ধাতু গ্রহণে যা হতে পারে
ক্যাডমিয়াম বা পারদ ফুসফুস বিকল করে দিতে পারে। ক্রোমিয়াম ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী। ক্যাডমিয়াম হাড়ের রোগ সৃষ্টি করে। পারদ ও সিসা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে। এই ধাতুগুলো পানি, মাটি ও খাদ্যদ্রব্যে সরাসরি প্রবেশ করে। ফলে গুরুতর মানবস্বাস্থ্যের সমস্যা যেমন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস, গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল ক্যানসার ও অপুষ্টি দেখা দিতে পারে।
সিসাদূষণ মানসিক বিকাশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে নিউরোলজিক্যাল ও কার্ডিওভাসকুলার রোগের সৃষ্টি করে। কিছু ভারী ধাতু যেমন লেড, ক্যাডমিয়ামের কারসিনোজেনিক প্রভাব রয়েছে। এগুলো হাড় ভাঙা ও ক্ষয়রোগ, কার্ডিওভাসকুলার জটিলতা, কিডনি বৈকল্য, হাইপারটেনশন, লিভার, ফুসফুসের মতো অন্যান্য গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে। ক্রোমিয়াম অন্যান্য ভারী ধাতুর চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। এটি স্থায়িত্বের দিক থেকেও সর্বোচ্চ। ফলে জন্মগত ত্রুটি, জেনেটিক ডিজঅর্ডার, শিশুমৃত্যু ও স্নায়ুবিক ত্রুটি দেখা যায়।
ভারী ধাতুযুক্ত খাবার কতটা খাবেন
যেসব ফলমূল ও সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত ভারী ধাতু পাওয়া গেছে, তা পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে গেলে হয়তো প্রতিদিনের খাবারের চাহিদা পূরণ কঠিন হবে। তাই এসব ফলমূল ও শাকসবজি সহনীয় মাত্রায় গ্রহণ করতে হবে। খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের সবজিকে প্রাধান্য দিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সবজি প্রতিদিন গ্রহণ না করে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেতে পারেন। একটি নির্দিষ্ট সবজি, বিশেষ করে যাতে ভারী ধাতু বেশি মিলেছে, তা অতিরিক্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বেগুন, বাঁধাকপি, শিম, শসা, ঢ্যাঁড়স, পটোল, টমেটো ও লালশাকে ভারী ধাতুর উপস্থিতি বেশি। তাই এসব খাবার সপ্তাহে এক দিন কিংবা দুই দিন এক থেকে দুই বেলা খেতে পারেন। এতে অতিরিক্ত পরিমাণে ভারী ধাতু শরীরের জমা হওয়ার ভয় কম।
জেনে রাখুন
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের শরীরে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও জিংকের ঘাটতি আছে, তাঁদের শরীরে ক্যাডমিয়াম নামের ভারী ধাতু বেশি শোষিত হয়। যাঁরা নিয়মিত ক্যালসিয়াম, আয়রন ও জিংকসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেন, তাঁদের শরীরে ক্যাডমিয়াম টক্সিসিটি তৈরি করতে পারে না।
এ ছাড়া এই ভারী ধাতুগুলো থেকে শাকসবজি ও ফলমূলকে মুক্ত রাখার জন্য শাকসবজি ও ফলমূলের উৎপাদনপ্রক্রিয়া নিয়মিত তদারক, উত্তম কৃষিচর্চার ওপর জোর দেওয়া, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।