মেডিটেরিয়ান ডায়েটের ৮ উপকারিতা

গ্রিস, ইতালি ও স্পেনের মতো ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে বসবাসকারী লোকদের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোই মূলত ভূমধ্যসাগরীয় খাবার। এসব খাবারে জলপাই তেল, বাদাম, মাছ ও শাকসবজি থাকে বেশি। এই খাবারগুলো খেলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি ও প্রদাহ কমে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতাসহ অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই অনেক পুষ্টিবিজ্ঞানীর কাছে মেডিটেরিয়ান ডায়েট বা ভূমধ্যসাগরীয় খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য সেরা।

ভূমধ্যসাগরীয় খাবারে খাবারে জলপাই তেল, বাদাম, মাছ ও শাকসবজি বেশি থাকে

চলুন চট করে জেনে নিই ভূমধ্যসাগরীয় খাবারের কিছু উপকারিতা:

১. হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়

প্রিডিমেড হলো ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত স্পেনে পরিচালিত একটি বৃহৎ ও যুগান্তকারী চিকিৎসা গবেষণা। এ গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমধ্যসাগরীয় খাবারের অন্যতম উপাদান এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমায়। এ ছাড়া এই তেল কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত করে। প্রদাহ কমায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

২. নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়

যেসব নারী ভূমধ্যসাগরীয় খাবার খান, তাঁদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কম থাকে। অলিভ অয়েল ও বাদামের মতো খাবারে প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে, যা নারীদের স্ট্রোক প্রতিরোধে বিশেষ সুবিধা দিতে পারে।

৩. আলঝেইমার প্রতিরোধ করে

ভূমধ্যসাগরীয় খাবার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। আলঝেইমারের ঝুঁকি হ্রাস করে। শাকসবজি, বিভিন্ন রকম ফল ও মাছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা নিউরনকে পুষ্টি জুগিয়ে অধিক কর্মক্ষম করে তোলে। মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমতে থাকে। ভূমধ্যসাগরীয় খাবার এই প্রক্রিয়ার বিপরীতে কাজ করে।

বাদাম ভূ-মধ্যসাগরীয় ডায়েটের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

৪. ওজন কমাতে

ভূমধ্যসাগরীয় খাবার পুষ্টিকর। ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এর ফলে ওজন হ্রাস পায়। ভূমধ্যসাগরীয় খাবারে থাকা প্রচুর ফাইবার দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৫. টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে

গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমধ্যসাগরীয় খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। এই খাবার ফাইবারে ভরপুর। তাই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে ব্যায়াম করা বা কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ভূমধ্যসাগরীয় খাবার খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৫২ শতাংশ পর্যন্ত কমে। অলিভ অয়েল ও বাদামের মতো গুড ফ্যাট শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক।

৬. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমায়

ভূমধ্যসাগরীয় খাবারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মাছ। মাছে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা প্রদাহ ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে পারে। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে ওলিক অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যৌগ রয়েছে। এটাও প্রদাহ ও আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। আর বাদামে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ই, যা প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

আরও পড়ুন
মাছ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

৭. ক্যানসার প্রতিরোধ করে

ভূমধ্যসাগরীয় খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (মাছ, বাদাম), অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যৌগ এবং পলিফেনলসমৃদ্ধ উপাদান থাকে। এগুলো শরীরের প্রদাহের মাত্রা কমায়, যা ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।

ভূমধ্যসাগরীয় খাবারে শাকসবজি, ফলমূল ও অলিভ অয়েলের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ উপাদানের প্রাধান্য রয়েছে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো কোষে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল থেকে সৃষ্ট ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে, যা ক্যানসার প্রতিরোধ করে। বি‌শেষ ক‌রে স্তন ক্যানসার ও কোলোরেক্টাল ক্যানসার প্রতিরোধ ক‌রে।

৮. বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায়

গবেষণায় দেখা গেছে, ফলমূল, শস্য ও বাদামে ট্রিপ্টোফ্যান নামে একটি অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা সেরোটোনিন উৎপাদনে সহায়ক। সেরোটোনিন ‘সুখের হরমোন’ হিসেবে পরিচিত, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে।

এ খাবারে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (মাছ ও বাদামে পাওয়া যায়) এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট (ফলমূল ও সবজিতে বিদ্যমান) মস্তিষ্কে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ বিষণ্নতার একটি অন্যতম কারণ। অন্যদিকে এতে প্রচুর ভিটামিন বি, ডি, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংক পাওয়া যায়, যা মানসিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়ক।


সূত্র: এভরিডে হেলথ

আরও পড়ুন