বারবার ফোড়া হওয়া কিসের লক্ষণ? হলে কী করবেন?

অধিকাংশ ফোড়ার পেছনে একটি ব্যাকটেরিয়া দায়ী
ছবি: সংগৃহীত

ফোড়া কী?

ফোড়া হলো চামড়ার নিচে জমাটবদ্ধ পুঁজ। সাধারণ ফোড়া ছাড়াও একই ধরনের আরেকটি সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার নাম কার্বাঙ্কল। কার্বাঙ্কল হলো একসঙ্গে কয়েকটি ফোড়ার সমষ্টি।

কোথায় হয়?

এসব সাধারণত চামড়ার নিচে হয়, যা খুব দ্রুত লালচে হয়ে বেড়ে ওঠে। সেই সঙ্গে থাকে অনেক ব্যথা।

কী কারণে হয়?

গবেষণায় জানা গেছে, অধিকাংশ ফোড়ার পেছনে এমন একটি ব্যাকটেরিয়া দায়ী, যা স্বাভাবিকভাবে আমাদের প্রত্যেকের চামড়াতেই অবস্থান করে। এর নাম ‘স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস’। এসব ব্যাকটেরিয়া কোনো ছোট ক্ষত বা চুলের গোড়া দিয়ে চামড়ার নিচে ঢুকে ফোড়া তৈরি করতে পারে।

কীভাবে হয়?

যেসব স্থানে বেশি ঘাম হয়, আর যেসব স্থান শেভ করা হয়, সেসব স্থানে ফোড়া বেশি হয়। সাধারণত মুখমণ্ডল, বগল, কুচকি, নিতম্ব, ঊরুসন্ধি—এসব স্থানে ফোড়া বেশি হয়। তবে শরীরের যেকোনো স্থানেই ফোড়া হতে পারে। এটি তৈরি হতে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।

কেন বারবার ফোড়া হয়?

বারবার ফোড়া হওয়ার পেছনে সাধারণত এই ব্যাকটেরিয়ার এমন একটি ধরন দায়ী, যা প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম। অণুজীববিজ্ঞানে একে বলা হয় এমআরএসএ (মেথিসিলিন রেজিস্ট্যান্ট স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস)। যাঁরা বিভিন্ন সময়ে ফোড়ার চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পন্ন করেননি, অর্থাৎ নির্দেশনামাফিক পূর্ণ চিকিৎসা নেননি, তাঁদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক–প্রতিরোধী জীবাণু দিয়ে বারবার সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া যাঁদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না কিংবা অন্য কোনো কারণে যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়, তাঁদেরও বারবার ফোড়া হতে পারে। ক্যানসার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি কিংবা স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবনের ফলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যেতে পারে।

চিকিৎসা

বেশির ভাগ ফোড়াই নিজে নিজে সেরে যায়। ফোড়া দেখা দিলে সে স্থানে ১০-১৫ মিনিট গরম সেঁক দিতে পারেন। তবে পিন বা কাঠি দিয়ে না খোঁচানোই ভালো, নইলে সংক্রমণ চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু কোনো ফোড়া যদি দুই সপ্তাহের বেশি সময় থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। বারবার ফোড়া হলে ফোড়া থেকে পুঁজ নিয়ে কালচার সেনসিটিভিটি পরীক্ষা করিয়ে তারপর অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসারও প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়

  • নিয়মিত গোসল করতে হবে।

  • সুতির জামাকাপড় পরলে বাতাস বেশি প্রবাহিত হয়, ফলে ঘাম কম হয়।

  • যাঁদের ঘাম বেশি হয়, তাঁরা ঘামাচি পাউডারও ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

  • ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

শেষ কথা

অনেক ক্ষেত্রে রোগী নিজেও জানেন না যে তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বারবার ফোড়া কিংবা বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার কারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। তাই এমন সমস্যায় ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।

ডা. রেজা আহমদ: কনসালট্যান্ট সার্জন, ইবনে সিনা হাসপাতাল, সুবহানীঘাট, সিলেট