দেশি ফল কেন খাবেন 

দেশি ফল কাঁঠাল

আমরা ফলমূল খাই ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি পূরণে। শাকসবজি থেকেও আমরা প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল পেতে পারি। কিন্তু শাকসবজি রান্নার সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেল নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু ফল রান্না করা হয় না, তাই সব পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়।

সম্প্রতি একটি খবরে প্রকাশিত হয়েছে যে দেশে বছরে ১৮ হাজার কোটি টাকার বিদেশি ফল আমদানি করা হয়। যার বড় অংশজুড়ে থাকে আপেল, মাল্টা ও আঙুর। এ ছাড়া ডালিম, নাশপাতি, বেরিজাতীয় ফলও আমদানি হয়। কিন্তু দেশীয় ফলেও আছে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল। বেশি অর্থ ব্যয় করে বিদেশি ফল খেলেই যে বেশি পুষ্টি পাওয়া যাবে, তা নয়। যদি দেশি ফলের সঙ্গে বিদেশি ফলের গুণাগুণ তুলনা করা যায়, তাহলেই তা স্পষ্ট হয়।

আপেলের পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রামে)

কার্বোহাইড্রেট ১৪ গ্রাম, চিনি ১০ গ্রাম, ফ্যাট ০.২ গ্রাম, প্রোটিন ০.৩ গ্রাম, ফাইবার ২.৪ গ্রাম, আয়রন ০.১২ মিগ্রা, ভিটামিন সি ৪.৫ মিগ্রা, ম্যাগনেশিয়াম ৫ মিগ্রা, পটাশিয়াম ১০৭ মিগ্রা, ক্যালসিয়াম ৬ মিগ্রা, ভিটামিন এ ৩ আইইউ, ক্যারোটিন ২৭ আইইউ, ভিটামিন কে ২.২ আইইউ।

পেয়ারার পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রামে)

কার্বোহাইড্রেট ১৪ গ্রাম, চিনি ৮.৯ গ্রাম, ফ্যাট ০.৯৫ গ্রাম, প্রোটিন ২.৫ গ্রাম, ফাইবার ৫.৪ গ্রাম, আয়রন ০.২৬ মিগ্রা, ভিটামিন সি ২২৮ মিগ্রা, ম্যাগনেসিয়াম ২২ মিগ্রা, পটাশিয়াম ৪১৭ মিগ্রা, ক্যালসিয়াম ১৮ মিগ্রা, ভিটামিন এ ৩১ আইইউ, ক্যারোটিন ৩৭৪ আইইউ, ভিটামিন কে ২.২ আইইউ। 

আঙুরের পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রামে)

কার্বোহাইড্রেট ১৮.১ গ্রাম, চিনি ১৫.৮ গ্রাম, ফ্যাট ০.১৬ গ্রাম, প্রোটিন ০.৭২ গ্রাম, ফাইবার ০.৯ গ্রাম,

আয়রন ০.৩৬ মিগ্রা, ভিটামিন সি ৩.২ মিগ্রা, ম্যাগনেসিয়াম ৭ মিগ্রা, পটাশিয়াম ১৯১ মিগ্রা, ক্যালসিয়াম ১০ মিগ্রা, ভিটামিন এ ৩১ আইইউ, ক্যারোটিন ৩৭৪ আইইউ, ভিটামিন কে ১৪.২ মাইক্রোগ্রাম।  

কাঁঠালের পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রামে)

কার্বোহাইড্রেট ১৯ গ্রাম, ফ্যাট ০.৬৪ গ্রাম, প্রোটিন ১.৭২ গ্রাম, ফাইবার ১.৫ গ্রাম, আয়রন ০.২০ মিগ্রা, ভিটামিন সি ১৩.৮ মিগ্রা, ম্যাগনেসিয়াম ২৯ মিগ্রা, পটাশিয়াম ৪৪৮ মিগ্রা, ক্যালসিয়াম ২৪ মিগ্রা, ভিটামিন এ ৫ মাইক্রোগ্রাম, ক্যারোটিন ৬১ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন কে ২৪.২ আইইউ।

দেখা যাচ্ছে আপেল ও পেয়ারা সমান পুষ্টিগুণের। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেয়ারা আপেলের চেয়ে বেশি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। আবার, আঙুর ও কাঁঠাল বা কলা সমান পুষ্টিগুণসম্পন্ন। এক কেজি আপেলের দামে চার-পাঁচ কেজি পেয়ারা কেনা সম্ভব। আবার এক কেজি আঙুরের দামে প্রায় ৪০টা বড় কলা বা দুই-তিনটা বড় কাঁঠাল কেনা সম্ভব। এ ছাড়া অন্যান্য দেশি ফল যেমন আম, পেঁপে, আমড়া, জাম্বুরা, জামরুল, আমলকীও পুষ্টিগুণে ভরা।

আরও পড়ুন

আবার বিদেশি ফল তাজা খাওয়া যায় না। সংরক্ষণের জন্য প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যবান্ধব না–ও হতে পারে। আমাদের দেশেও খাদ্যে ভেজালের পাশাপাশি ফল পাকাতে কিছু রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

আগামীকাল পড়ুন:  স্কুলে ফিরছে শিশুরা, কীভাবে তাদের ট্রমা কাটবে?

মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল