যাত্রার সময় বমির প্রবণতা কমাতে যেসব নিয়ম মানবেন
ঈদযাত্রায় ভোগান্তি যতই থাকুক, নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটে যান বহু মানুষ। যানজট কিংবা যানবাহনের জন্য অপেক্ষা ছাড়াও কিন্তু শারীরিক অসুবিধার কারণে কারও কারও যাত্রাপথের ভোগান্তি বাড়ে। যেমন বমির প্রবণতা। ভ্রমণের সময় অনেকেই ভোগেন এ সমস্যায়। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে এ প্রবণতা অনেকটাই কমে আসে। জেনে রাখুন সেসবই—
যাত্রার সময় বমির প্রবণতা কমাতে যানবাহন ও যানবাহনের আসন নির্বাচন করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। সঙ্গে যাত্রার সময়ও নিজের প্রতি একটু যত্নশীল হতে হবে। যাত্রার আগে ও যাত্রাবিরতিতে কী খাচ্ছেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ওষুধ আছে, যেসব সেবনে সমস্যা খানিকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে সেই ওষুধ কখন সেবন করতে হবে, তা–ও জানা থাকা চাই। এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকার স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাসনোভা মাহিন।
যানবাহন ও আসন
জানালার পাশের আসন নিতে চেষ্টা করুন।
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যানবাহন আবদ্ধ রাখতেই হয়। কারও কারও এ ধরনের বদ্ধ যানবাহনে বমির প্রবণতা বাড়ে। তাই তাঁদের জন্য সম্ভব হলে এমন যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে, যেটির জানালা খোলা যায়। তবে সব ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব না হলেও কিছুটা বাড়তি বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা করে দেখতে পারেন। ব্যাটারিচালিত ছোট ফ্যান রাখতে পারেন নিজের কাছে।
যানবাহনের সামনের দিকের আসনে বসতে চেষ্টা করুন। ট্রেনের ক্ষেত্রে গন্তব্য অভিমুখে বসার চেষ্টা করুন। উল্টা দিকে মুখ করে বসলে বমির প্রবণতা বাড়বে।
তবে নৌপথে ভ্রমণের সময় একেবারে সামনের দিকে না বসে মাঝামাঝি আসনে বসা ভালো। এ ক্ষেত্রে ওপর দিকের আসন এড়িয়ে চলুন।
নিজস্ব যানবাহনে যাতায়াত করলে যে এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করছেন, সেটি যাতে তীব্র ধরনের না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। সবচেয়ে ভালো হয় অতীত অভিজ্ঞতা থেকে সহনীয় এয়ার ফ্রেশনাল ব্যবহার করা।
যাত্রার সময়
দূর দিগন্তের দিকে চোখ রাখুন। চলমান কোনো কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকবেন না।
ভ্রমণের সময় মুঠোফোন বা অন্য কোনো গ্যাজেটের পর্দায় তাকিয়ে থাকবেন না। এমনকি ভ্রমণের সময় বই পড়লেও সমস্যা বাড়তে পারে।
আরাম করে বসুন। পিঠ রাখুন আসনে। মাথা এলিয়ে দিন এবং মাথা স্থির রাখতে চেষ্টা করুন। চোখ বুজেও থাকতে পারেন।
হালকা কোনো সুগন্ধি দ্রব্য রাখতে পারেন হাতে। এটি হতে পারে কমলা, কমলার খোসা, লেবুর টুকরা বা লেবুপাতা; টিস্যু পেপারে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল দিয়েও কাছে রাখতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, তীব্র গন্ধে বমির প্রবণতা বাড়ে।
যাত্রার সময় আদাকুচি চিবুতে পারেন অল্প করে।
এক-দুই ঢোক ঠান্ডা পানিও খেতে পারেন।
খাবারদাবার, ওষুধ এবং অন্যান্য
যাত্রা শুরুর অন্তত এক ঘণ্টা আগেই খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে ফেলুন। হালকা খাবার খান, যা সহজে হজম হয়। ভরপেট খাবেন না। আবার একেবারে খালি পেটে থাকলেও বমিভাব হতে পারে।
বমির প্রবণতা কমানোর ওষুধ যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটি খেতে হবে খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগেই।
দীর্ঘযাত্রার ক্ষেত্রে যাত্রাবিরতিতেও ওষুধের আরেকটি ডোজের প্রয়োজন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিরতির আধা ঘণ্টা আগেই অল্প পানি দিয়ে ওষুধটি খেয়ে নিন।
বিরতিতেও অল্প পরিমাণে খাবার খান। এ সময়ও হালকা খাবার খাওয়া ভালো। চাইলে এ সময়ের জন্য শুকনা খাবার বা ফলমুল সঙ্গে রাখতে পারেন। ফলের রসও করে নিয়ে আসতে পারেন সঙ্গে।
যাত্রার সময় কিংবা যাত্রার আগে তেল-চর্বি ও মসলাসমৃদ্ধ খাবার খাবেন না; ডিম–দুধও না খাওয়াই ভালো। যেসব খাবার ডিম বা দুধ দিয়ে তৈরি হয়, সেসবও এড়িয়ে চলুন। চা-কফিও খাবেন না। ধূমপান ও মদ্যপান অবশ্যই বর্জনীয়। আশপাশে কেউ ধূমপান করলে তাঁকেও নিষেধ করুন।