ক্যানসারের সরাসরি কারণ এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে জানা যায় না। কিন্তু কিছু পরিস্থিতি ক্যানসারের প্রবণতা নির্দেশ করতে পারে। অর্থাৎ এখনো ক্যানসার নয়, কিন্তু এর পূর্বাবস্থা বা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা রয়েছে; যা দ্রুত চিকিৎসা না করলে বা অপসারণ না করলে অদূর ভবিষ্যতে ক্যানসারে পরিণত হতে পারে।
অ্যাডেনোমাটাস পলিপ (পলিপ হলো মাংসের পিণ্ড) পায়ুপথের সঙ্গে অনেক সময় লেগে থাকে। পরীক্ষা করলে ক্যানসার–পূর্ববর্তী অবস্থায়ও অস্বাভাবিক কোষ থাকতে পারে, যা ক্যানসারের আভাস দেয়। একটা বা একাধিক পলিপ হতে পারে বৃহদান্ত্রে। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে এটি খুব বেশি দেখা যায়। শিশুর কিছু একটা পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে, সঙ্গে থাকে রক্তপাত। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি কিন্তু ক্যানসারের পূর্বলক্ষণ নয়। কিন্তু তরুণ বা ৪০-৫০–ঊর্ধ্ব কারও একই সমস্যা থাকলে সতর্ক হতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সাধারণত পারিবারিক ইতিহাস থাকে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কম বয়সে কারও কারও শতাধিক ছোট পলিপ থাকতে পারে। এটা জিনগত ত্রুটির কারণে হয়। একে ফ্যামিলিয়াল অ্যাডেনোমাটাস পলিপোসিস সংক্ষেপে এফএপি বলে। বয়স্কদের একটি বা দুটি পলিপ থাকে।
এগুলো ক্যানসার সিনড্রোমের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে পরিবারে অনেক ধরনের ক্যানসারের আধিক্য থাকতে পারে। এটিও জিনগত ত্রুটির কারণে হয়। এই পলিপ বা অ্যাডেনোমা একটা কোষগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, যার ফলে এ থেকে ক্যানসার হতে পারে। একে বলে অ্যাডেনোমা কার্সিনোমা সিকোয়েন্স।
অ্যাডেনোমাটাস পলিপের ধরন
টিবুলার অ্যাডেনোমা আঙুলের মতো দেখতে। পায়ুপথের সঙ্গে সরু নালির সাহায্যে ঝুলে থাকে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হলেও বড়দের ক্ষেত্রে এটি অপসারণ করে পরীক্ষা করা উচিত। ভিলাস অ্যাডেনোমা দেখতে ফুলকপির মতো। পায়ুপথের সঙ্গে বড় জায়গাজুড়ে লেগে থাকে। এটির ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা খুবি বেশি এবং এটি তার শিকড়সহ কিছুটা স্বাভাবিক পায়ুপথের স্থান নিয়ে অপসারণ করা হয়। টিবুলোভিলাস অ্যাডেনোমা পূর্ববর্তী দুটির মিশ্রিত রূপ। এটিকেও ক্যানসারের পূর্ববর্তী পর্ব ধরা হয়।
লক্ষণ
পলিপের লক্ষণ না–ও থাকতে পারে। তবে পাতলা পায়খানা, আমযুক্ত রক্তমিশ্রিত পায়খানা, রক্তপাত, পেটে মোচড় দেওয়া, পেটে অস্বস্তি ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে। অনেক সময় রুটিন কোলোনোস্কপি করে দেখা যায়, এক বা একের বেশি পলিপ আছে।
পায়ুপথে আঙুলের সাহায্যে পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। পলিপ ছাড়া আঙুলের মাথায় রক্তের ভাব, আম ইত্যাদি দেখেও বোঝা যায় সমস্যা আছে কি না। কোলোনোস্কপি করা উচিত, বিশেষ করে যাঁদের পারিবারিক ইতিহাস আছে অথবা হঠাৎ করে উল্লেখিত কোনো সমস্যা অনুভব করা যাচ্ছে। এর ফলে এই পলিপ ক্যানসারে রূপ নেওয়ার আগেই অপসারণ করা সম্ভব।
চিকিৎসা
কোন অবস্থায় রোগী এসেছেন, তার ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে। যদি জটিল না হয় বা অন্য কোনো রোগ না থাকে, তবে শুধু কোলোনোস্কপি করেই এটি অপসারণ করা যায়। কিন্তু যেহেতু এগুলো পারিবারিক ইতিহাস ও কিছু সিনড্রোমের সঙ্গে জড়িত, তাই পুরো শরীরের চেকআপ করা জরুরি।
অবস্থা বিশেষে অনেক বড় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। একমাত্র সচেতনতাই পারে এ–জাতীয় পরিস্থিতি খুব প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় ও সম্পূর্ণ নির্মূল করতে।
অধ্যাপক ডা. লায়লা শিরিন, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।