মৌসুম
ঠান্ডা কাশির এ সময়ে
মৌসুমি কাশি উপশমে ওষুধের চেয়ে জীবনযাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তনটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ
বায়ু শনশন
শীতে কনকন
কাশি খনখন
ফোড়া টনটন
সেই কবে লিখে গেছেন সুকুমার রায়। আজও কনকনে শীত আর শনশন বায়ুতে ঘরে ঘরে শোনা যায় কাশির খনখন শব্দ। তাপমাত্রার তারতম্য, শীতের প্রকোপ আর জীবাণুর জিনগত পরিবর্তন—এই সব চলতেই থাকে। আর বছরের এই সময় ঠান্ডা-কাশি লেগে থাকে ঘরে ঘরে। অল্পস্বল্প কাশি হলেই কিন্তু বদ্যিবাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতিতেই এ সময়কার অধিকাংশ কাশি সেরে যায়।
কুসুম গরম পানীয় পান আর কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার এমন কাশির উপশমে সহায়ক হবে। পাশাপাশি সচেতন থাকতে হবে, যাতে কাশির মূল কারণটিকে এড়িয়ে চলা যায়। নইলে উপশম হওয়ার পরও বারবার এমন কাশির উদ্রেক হতে থাকবে। ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার খেলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ভিটামিন ডি-ও সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। মৌসুমি কাশি উপশমে ওষুধের চেয়ে জীবনযাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তনটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহনূর শারমিন।
মূল কারণটি খুঁজে দেখুন
ঠান্ডায় অনেকেই অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন। ধুলাবালু কিংবা অন্য কোনো নির্দিষ্ট উপাদান, যেমন নির্দিষ্ট কোনো খাবার, প্রাণীর লোম কিংবা কার্পেটের তন্তুতে অ্যালার্জির সমস্যা লুকানো থাকতে পারে। কারও অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে, তার মানে কিন্তু এই নয় যে তাঁর জন্য চিংড়ি, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস সবই নিষিদ্ধ হয়ে গেল। কিংবা এমনটাও নয় যে তাঁর বাড়িতে কোনো লোমশ প্রাণী রাখা যাবে না। বরং খুঁজে বের করতে হবে, কোন জিনিসটির কারণে তাঁর অ্যালার্জি হচ্ছে। কেবল সেই জিনিস এড়িয়ে চললেই তাঁর হুটহাট ঠান্ডা-কাশির প্রবণতা অনেকাংশেই কমে আসবে। আনারস কিংবা পুঁইশাকেও অ্যালার্জি থাকতে পারে কারও। নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমেও নির্ণয় করা যায়, কার কোন জিনিসে অ্যালার্জি রয়েছে।
মধু চাই
কুসুম গরম চা কিংবা পানিতে মধু যোগ করে পান করতে পারেন। এতে মধুর উপকার যেমন পাবেন, তেমনি চা ও পানির স্বাদও বাড়বে। এর বাইরেও মধু খেতে পারেন নানাভাবে। সাদা চিনির দারুণ এক বিকল্প মধু। শুধু চায়েই নয়, শীতের পিঠাপুলিতেও চিনির পরিবর্তে মধু দিতে পারেন। জেলি দিয়ে পাউরুটি খাওয়ার অভ্যাস আছে? তাহলে জেলির বদলে মধু বেছে নিন। মধুকে বলা হয় ঠান্ডার প্রতিষেধক। তাই মধু খেতেই পারেন। তবে মধুর উৎসটি যেন খাঁটি হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সচেতনতা সব সময়
হিমেল হাওয়ার দিনে হিম এড়িয়ে চলতে হবে যতটা সম্ভব। খেয়াল রাখুন, ঠান্ডা হাওয়া যাতে সরাসরি নাক-মুখ দিয়ে প্রবেশ করতে না পারে। নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। মাস্ক পরলে যেমন জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচবেন, তেমনি বাঁচবেন হিম হাওয়ার প্রকোপ থেকেও। মাথা ও কানও ঢেকে রাখতে হবে ভালোভাবে। ঠান্ডা খাবারও এড়িয়ে চলুন এই সময়। রোদের দেখা পেলে খানিকটা সময় রোদেই কাটান।
টুকিটাকি সমাধান
কাশি হলে বাড়িতে যা করতে পারেন—
কুসুম গরম পানি কিংবা পানীয় গ্রহণ করতে পারেন। বাড়িতে সাধারণভাবে রং চা, কফি, স্যুপ তো খেতেই পারেন। লেবু, মধু, আদা, লবঙ্গ—এসব উপকরণের যেকোনোটিও যোগ করতে পারেন চায়ে। লেবু বা মধু যোগ করতে চাইলে চুলা থেকে চা নামানোর পর উত্তাপ খানিকটা কমে এলে অর্থাৎ কুসুম গরম হয়ে এলে এগুলো যোগ করা ভালো।
কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস বা মধু যোগ করেও খেতে পারেন।
তুলসীপাতা এবং বাসক পাতার রসও কাশির উপশম করে।
ভিটামিন সি উত্তাপে নষ্ট হয়ে যায়। টাটকা, তাজা টকজাতীয় ফলে ভিটামিন সি পাবেন পর্যাপ্ত। ঠান্ডা-কাশি উপশমে সহায়তা করে ভিটামিন সি। তা ছাড়া শরীরের ম্যাজমেজে ভাব কমাতেও সহায়তা করে এই ভিটামিন।
·কুসুম গরম পানিতে গড়গড়া করতে পারেন। তবে গলাব্যথা থাকলে গড়গড়া না করাই ভালো।
·খুসখুসে কাশি হলে মুখে আদা কিংবা লবঙ্গ রাখতে পারেন। একটু একটু করে চিবিয়ে রসটা গ্রহণ করলে কাশি কমে আসবে।