গ্রীষ্মের শুরুতেই প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ দেশবাসীকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে সংবাদ আসছিল হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর। পানিশূন্যতা, লবণশূন্যতা, তাপজনিত নানা রোগবালাই বাড়ছিল। এ তাপপ্রবাহের কারণে মৌসুমের সবচেয়ে বড় বিপদ ডেঙ্গুর বিষয়টি অনেকটা আড়ালে চলে যায়। দেশের আনাচকানাচে যে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হওয়া শুরু করেছে, তা যেন খেয়াল করা হয়নি।
তাপপ্রবাহ শেষে বৃষ্টি ও ঝড়ের পর ডেঙ্গুর ঝুঁকি এখন বেশ বেড়েছে। সামনে আসছে বর্ষা। এ মৌসুম থেকে একেবারে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত থাকবে ডেঙ্গুর প্রকোপ। গত বছর ডেঙ্গু মৌসুম প্রায় শীত পর্যন্ত প্রলম্বিত হতে দেখা গেছে। মৃত্যুহারও ছিল অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি।
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে প্রতিবছর দেখা যায়, মৌসুমের শুরুতে না সাধারণ মানুষ, না কর্তৃপক্ষ—কারও কোনো সচেতনতা থাকে না। যখন বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে, হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ে, তখন তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু ডেঙ্গু মোকাবিলা করতে হবে বছরজুড়ে। বিশেষ করে মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ বর্ষা আসার আগেই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডেঙ্গুর যেহেতু তেমন কার্যকর কোনো চিকিৎসা নেই, পুরো চিকিৎসাই উপসর্গ ও জটিলতা নিরসনের, তাই প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। অথচ এখনো এ বিষয়ে আমাদের কারও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না, যার যার আবাসস্থল পরিচ্ছন্ন ও মশামুক্ত রাখার মাধ্যমেই শুধু আমরা এ মারণঘাতী ব্যাধি থেকে নিজের পরিবারকে দূরে রাখতে পারি।
বাড়ির টব, টায়ার, এসির পানি যেখানে জমে, তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, পাড়ায় পাড়ায় জমে থাকা পানি, নালা, ডোবা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করা এবং মশা নিরোধক ছিটাতে নিজেদেরই এগিয়ে আসতে হবে। সিটি করপোরেশনের উচিত এখনই বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি ও নির্মাণাধীন ভবনের অভ্যন্তর পরিষ্কার করতে নেমে পড়া, মশা নিরোধক কার্যকর স্প্রে ব্যবহার করা।
করণীয়
বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখন বাড়বে এডিস মশার প্রজনন। প্রজননক্ষেত্রগুলো এখনই ধ্বংস করতে হবে।
বিগত বছরগুলোয় এডিস মশা তার স্বাভাবিক চরিত্র বদল করেছে। দিন ছাড়াও রাতের বেলায় কামড়াচ্ছে। পরিষ্কার পানি ছাড়াও এ মশা জন্মাচ্ছে। তাই মশার সব ধরনের আবাসস্থল পরিষ্কার করতে হবে।
শিশুদের দিনে–রাতে যখনই ঘুম পাড়ানো হোক, মশারি ব্যবহার করতে হবে। স্কুল বা কোচিংয়ে যাওয়ার সময় হালকা রঙের পাতলা ফুল স্লিভ প্যান্ট ও জামা পরাতে হবে। ত্বকে মশা নিরোধক মলম ব্যবহার করা যায়; তবে সাবধান থাকতে হবে যেন মুখের ভেতর না যায়।
জ্বর হলে অবশ্যই তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গু এনএসওয়ান টেস্ট করবেন। বেশির ভাগ জটিলতা সৃষ্টি হয় রোগ দেরিতে ধরা পড়া ও দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে। তাই জ্বর হলে এখন কোনো অবহেলা নয়।
জ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। বিশ্রাম নিতে হবে। শিশুদের স্কুলে পাঠানো যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ