জিমে যে ৭টি ভুল আমরা নিয়মিতই করি
শরীরের সুস্থতার জন্যই আমরা জিমে যাই। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, জিমে সময় দিয়েও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কেন? আসলে সামান্য কিছু ভুল অভ্যাসের কারণে শরীরচর্চা করেও লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হই আমরা। আসুন, তেমন সাতটি ভুলের কথা জেনে নিই।
১. ভারী ব্যায়ামে বেশি সময় ব্যয়: অনেকেই টানা জিমে গিয়ে আবার কিছুদিনের বিরতি নেন। বিরতির পর ফিরেই অনেক কঠিন কঠিন ব্যায়াম শুরু করেন। কঠিন ব্যায়াম যে শরীর গঠনে দ্রুত পরিবর্তন আনবে, বিষয়টি কিন্তু এমন না। নিজের শরীরকে না বুঝে অহেতুক কঠিন পরিশ্রম করলে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন, ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। যখন খুব ভারী ব্যায়াম করবেন, তখন আপনার শরীরের নির্দিষ্ট মাংসপেশির ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ জন্য খুব বেশি পরিশ্রম না করে নিজের শরীর বুঝে ব্যায়াম শুরু করুন। প্রশিক্ষকের কাছ থেকে বুঝে নিন, কীভাবে শুরু করবেন।
২. স্ট্রেচিং না করেই ব্যায়াম: জিমে পা রেখেই দ্রুত ব্যায়াম শুরু করলেন। এতে লাভের চেয়ে লসই বেশি। শরীরচর্চায় কখনোই দ্রুত কিছু হয় না। তাই জিমে ঢুকে একটু স্ট্রেচিং না করে ব্যায়াম শুরু করবেন না। হুট করে ব্যায়াম শুরু করলে শরীরের মাংসপেশিতে টানসহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এটা অনেকটা গাড়ির ইঞ্জিন গরম করার মতো। বন্ধ গাড়ির ইঞ্জিন চালু করেই দক্ষ চালকেরা গাড়ি চালান না, একটু বসে ইঞ্জিন গরম করে নেন। আপনিও জিমে গিয়ে কিছুটা গা গরম করে ব্যায়াম শুরু করুন। শরীরকে প্রস্তুত হতে সময় দিন।
৩. সংখ্যা গুনছেন কিন্তু মনোযোগ দিচ্ছেন না: মাংসপেশির উন্নয়নের জন্য হয়তো ১০ কেজির ডাম্বল নিয়ে ব্যায়াম করেই গেলেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হলো না। মনে মনে হয়তো ১ থেকে ২০ পর্যন্ত গুনে গুনে দ্রুত ডাম্বল তুললেন। লাভ হবে না। ব্যায়ামের ক্ষেত্রে শরীরের মধ্যে সমন্বয় ভীষণ জরুরি। যে ব্যায়াম করছেন, যে মাংসপেশির পরিবর্তনের জন্য কাজ করছেন, তার ওপর গুরুত্ব দিন। সময় নিয়ে মাসলের উন্নয়নে কাজ করুন। দেখবেন ধীরস্থির ব্যায়ামে মাংসপেশির পরিবর্তন ঘটছে। ব্যায়ামের ক্ষেত্রে দ্রুত কোনো পরিবর্তন আশা করবেন না।
৪. বিশ্রাম নিচ্ছেন না: নিয়মিত জিমে যাচ্ছেন, কিন্তু কোনো পরিবর্তন দেখছেন না? এই পরিবর্তন চোখে না পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে জিমে ঠিকঠাক বিশ্রাম না নেওয়া। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মাংসপেশি ব্যায়ামের কারণে সক্রিয় থাকে। মাংসপেশিতে পরিবর্তন আনতে একেকটি ব্যায়ামের পরে বিশ্রাম ভীষণ জরুরি। ব্যায়ামে মাংসপেশিতে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন আসে। মাংসপেশির উন্নয়নের জন্য ব্যায়ামের পরে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে।
৫. অনিয়মিত প্রশিক্ষণ: ব্যায়ামের ফলাফল ঠিকমতো পাওয়ার প্রথম চ্যালেঞ্জ নিয়মিত জিমে যাওয়া। একই সঙ্গে কাউকে দেখে কিংবা তাড়াহুড়ো করে ব্যায়ামের ধরন পরিবর্তন করবেন না। একদিন ব্যায়াম করে তিন দিন জিম থেকে দূরে থাকার অভ্যাস যাঁদের আছে, তাঁরা জিমে গিয়ে কোনো ফায়দা পাবেন না। নিয়মিত জিমে গিয়ে প্রশিক্ষণ না নিলে শরীর গঠনে পিছিয়ে পড়বেন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে প্রশিক্ষণ তালিকা অনুসরণ করছেন, তা একটানা অনেক দিন করে যেতে হবে। ব্যায়ামের ভালো ফলাফল আসতে সময় লাগে, সেই সঙ্গে পরিশ্রম লাগে—এটা মাথায় রাখুন।
৬. বিরতির মধ্যে আলসেমি: ব্যায়ামের জন্য বিশ্রাম গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলে অনেক সময় নিয়ে অনেকক্ষণ বসে থেকে মোবাইল ফোনে সময় দেওয়া যাবে না। প্রতি সেট ব্যায়ামে অন্তত ৯০ সেকেন্ডের বিরতি নিয়ে আবারও শুরু করতে পারেন। ব্যায়াম করলে হৃদ্যন্ত্রের গতি, শরীরের গতিপ্রকৃতিতে পরিবর্তন আসে। অনেক সময় বেশি বিরতি নিয়ে ব্যায়াম করলে শরীরের গতি হারিয়ে যায়।
৭. ডায়েটে অনিয়ম: ব্যায়াম করছেন আর শরীরের পুষ্টিতে কোনো নজর নেই, তাহলে ব্যায়াম করে খুব একটা লাভ হবে না। অপরিকল্পিত খাদ্যাভাস, অপরিমিত ঘুমের মতো বিষয়গুলো ব্যায়ামের ফলাফলকে দুর্বল করে। শুধু ব্যায়াম করে মাংসপেশির উন্নয়ন সম্ভব নয়, প্রয়োজন পুষ্টিরও সমন্বয়। সব ধরনের খাবার পরিমিত গ্রহণের মাধ্যমে শরীরকে ব্যায়ামের জন্য তৈরি করতে হবে। অপুষ্টিকর খাবার আপনার ব্যায়ামের লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করবে। তাই পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিকঠাক খাবারের বিষয়ে জেনে নিন।
সূত্র: ফেমিনা অনলাইন