উচ্চতা সাপেক্ষে আপনার ওজন কত হওয়া উচিত?

উচ্চতা সাপেক্ষে প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তির ওজন ঠিক আছে কি না, তার একটি মাপকাঠি রয়েছে
ছবি: পেকজেলস

উচ্চতা সাপেক্ষে প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তির ওজন ঠিক আছে কি না, তার একটি মাপকাঠি রয়েছে। এই মাপকাঠির নাম বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই)। সংক্ষেপে বিএমআই।

ইন্টারনেট থেকে অ্যাপ নামিয়ে বিএমআই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে আপনি এক নিমিষেই নিজের বিএমআই বের করে ফেলতে পারবেন। চাইলে অ্যাপ ছাড়াই আপনি নিজেও কাজটি করতে পারেন।

সাধারণত ফুট ও ইঞ্চির হিসাবে আমরা উচ্চতা মেপে থাকি। তবে বিএমআই বের করতে হলে আপনার উচ্চতাকে মিটারে নিতে হবে। আজকাল ইন্টারনেট থেকে সরাসরি ফুট বা ইঞ্চিকে মিটারে রূপান্তর করার সুযোগ রয়েছে। আবার আপনি নিজেও একটু অঙ্ক করে বের করে নিতে পারেন। এক ইঞ্চি = ২ দশমিক ৫৪ সেন্টিমিটার। এবার সেন্টিমিটারকে করে ফেলুন মিটার। একে এরপর বর্গ করতে হবে। 

অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে নানা রোগের যোগ আছে
ছবি: প্রথম আলো

এবার আপনার ওজন যত কেজি, সেই সংখ্যাটিকে বর্গ করে পাওয়া সংখ্যাটি দিয়ে ভাগ করুন। ভাগফলই আপনার বিএমআই।

স্বাভাবিক বিএমআই হলো ১৮ দশমিক ৫ থেকে ২৪ দশমিক ৯ পর্যন্ত। ২৫ থেকে ২৯ দশমিক ৯–এর মধ্যে বিএমআই থাকার অর্থ হলো আপনার ওজন বেশি বা আপনি ওভারওয়েট। আর বিএমআই যদি হয় ৩০ বা তার বেশি, তাহলে আপনি স্থূলকায় ব্যক্তি বা ওবেস। এশীয়দের জন্য অবশ্য বিএমআই ২৩–এর বেশি হলেও তাকে ওভারওয়েট ধরা হয়ে থাকে।

কেন ওজন নিয়ন্ত্রণ দরকারি

অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে নানা রোগের যোগ আছে। এই তালিকায় এমন সব রোগ রয়েছে, যেগুলো জীবনকে করে তুলতে পারে বিপন্ন। বাড়তি ওজনে বাড়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গেও অতিরিক্ত ওজনের সম্পর্ক রয়েছে। ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপের জটিলতায় হতে পারে স্ট্রোক, হৃদ্‌রোগ, কিডনিবৈকল্য। স্ট্রোক এবং হৃদ্‌রোগও ওজনের সঙ্গে সম্পর্কিত। যাঁদের ওজন বেশি, তাঁদের রক্তে চর্বির মাত্রা বাড়তে পারে। এতে স্ট্রোক এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে। শরীরের বাড়তি চর্বির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে লিভারও, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ফ্যাটি লিভার ডিজিজ।

স্থূলতার কারণে অল্পতেই আপনি হাঁপিয়ে উঠতে পারেন। হতে পারে ওবেসিটি হাইপোভেন্টিলেশন সিনড্রোম। অর্থাৎ স্থূলতা হলে শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যাহত হওয়ার রোগ হতে পারে। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার সঙ্গেও রয়েছে অতিরিক্ত ওজনের সম্পর্ক। এটি এমন এক মারাত্মক রোগ, যার কারণে ঘুমের সময় রোগীর স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যাহত হয়। নষ্ট হয় শরীরের অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য। মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ফলে ঘুমের মধ্যে হুট করে স্ট্রোকও হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা ঘুমের মধ্যে প্রচণ্ড নাক ডাকেন। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এসব রোগের জটিলতা থেকে নিজেকে বাঁচানো সম্ভব।

স্থূল ব্যক্তির স্বাভাবিক চলাফেরাও কিন্তু সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ওজনের জন্য দ্রুত ক্ষয়ে যেতে থাকে হাঁটুর জয়েন্ট। হাঁটুর জয়েন্ট ক্ষয়ে যাওয়ার রোগকে বলা হয় অস্টিওআর্থ্রাইটিস। ফলে সিঁড়ি বাইতে কিংবা একটু উঁচু জায়গায় উঠতে নিদারুণ সমস্যায় পড়তে হয়। রিকশা, ফুটপাতসহ নানান ছোটখাটো উচ্চতায় ওঠার কাজে অসুবিধা হয়। স্থূল ব্যক্তির পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। স্থূলতার সঙ্গে কিছু ক্যানসারেরও সম্পর্ক রয়েছে বলে গবেষকেরা ধারণা করছেন।