মেরুদণ্ডের আঘাতে ফিজিওথেরাপি

আমাদের দেশে নিয়মিত বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এর ফলে কিছু মানুষ অকালে জীবন হারাচ্ছেন, আবার চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। এর মধ্যে কেউ হাত, কেউ পা আবার কেউ মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে হারাচ্ছেন হাঁটাচলার ক্ষমতা। এ ধরনের দুর্ঘটনার মধ্যে মেরুদণ্ডের আঘাত পাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা অনেক বেশি।

মেরুদণ্ডে আঘাতজনিত রোগীর পুনর্বাসনের জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, যা ধীরে ধীরে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছবি: পেক্সেলস ডটকম

মেরুদণ্ডে আঘাত পেলে কী করবেন

কেউ মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে থাকলে তাঁকে সোজা করে শুইয়ে দিন এবং দ্রুত রোগীকে আশপাশের হাসপাতালে নিয়ে যান। পাশাপাশি রোগীর আঘাতের পরিমাণ নির্ণয় করতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাধারণত যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • হাত ও পায়ের অনুভূতি চলে যেতে পারে।

  • যদি আঘাত মেরুদণ্ডের সারভাইক্যাল স্পাইনের ওপর দিকে সি২-৩ অথবা সি৩-৪ লেভেলে কম্প্রেশন ইনজুরি হয়, সে ক্ষেত্রে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা লাগতে পারে। কারণ, এই জায়গা থেকে আমাদের রেসপিরেটরি মাংসপেশিগুলোর নার্ভ সাপ্লাই হয়ে থাকে।

  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে সারভাইক্যাল স্পাইনের বা ঘাড়ের জন্য প্যারাফ্লেজিয়া বা চার হাত-পা অবশ হয়ে যেতে পারে এবং লাম্বার স্পাইন অবশ হয়ে যেতে পারে।

  • রোগী প্রস্রাব ও পায়খানার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারেন, এসব ক্ষেত্রে রোগীর ক্ষতি বা আঘাতের পরিমাণ নির্ণয় করে কখনো স্কেলিটাল বা টং ট্রাকশন, কখনো পেলভিক ট্রাকশন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন পড়ে।

এসব জরুরি চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর পুনর্বাসনের জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, যা ধীরে ধীরে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। মেরুদণ্ডে আঘাতজনিত প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীকে আবার আগের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনতে ওষুধের পাশাপাশি এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা।

একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দুই থেকে ছয় মাস নিয়মিত দিনে তিন-চারবার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীকে পুনর্বাসনের জন্য একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান (চিকিৎসার পরিকল্পনা) তৈরি করে থাকেন।

এর মধ্যে রয়েছে ম্যানুয়াল থেরাপি, স্ট্রেন্দেনিং এক্সারসাইজ, প্রগ্রেসিভ কন্ডিশনাল এক্সারসাইজ, প্যারালাল বার এক্সারসাইজ, গেইট ট্রেনিং বা গেইট রি-এডুকেশন এক্সারসাইজ, ইলেকট্রোথেরাপি বা ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন থেরাপি, অকুপেশনাল ট্রেনিং, ব্লাডার ট্রেনিং ইত্যাদি রয়েছে।

  • এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি