আপনি কি একটু বেশিই মনোযোগ চান? তাহলে এই রোগ থাকতে পারে আপনারও
অন্যের প্রশংসা পেতে কে না চায়। কোনো একটি আসরের মধ্যমণি হয়ে থাকারও একটা আলাদা আনন্দ আছে। কিন্তু এই চাওয়া কি সব সময় সব জায়গায় সঠিকভাবে হচ্ছে? একটু বেশি মনোযোগ চেয়ে ফেলছি? না পেলে অনেক বেশি রাগ হচ্ছে, মন খারাপ হচ্ছে? অন্যের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে? তাহলে ‘হিস্ট্রিয়নিক পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার’ সম্পর্কে আপনার জেনে রাখা ভালো।
হিস্ট্রিয়নিক পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার কী
হিস্ট্রিয়নিক পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার একধরনের মানসিক সমস্যা, যেখানে মানুষ সব সময় সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চায়। হিস্ট্রিয়নিক শব্দের অর্থ নাটকীয়। মনোযোগ না পেলে এই ব্যক্তিত্বসম্পন্নরা নাটকীয়ভাবে তাঁদের আবেগ প্রকাশ করে ফেলেন এবং এই আচরণ বা চিন্তা যে সঠিক নয় বা সমস্যার সৃষ্টি করছে, এটা তাঁরা বুঝতে পারেন না।
বৈশিষ্ট্য কী
১. মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চাওয়া।
২. সব সময় প্রশংসা চাওয়া; পরিবারে বা কর্মস্থলের অন্য কারও প্রশংসা মেনে নিতে না পারা।
৩. সব সময় সেজেগুজে থাকতে, রঙিন কাপড় পরতে ও শারীরিক সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পছন্দ করা।
৪. যেকোনো কিছুর বর্ণনা নাটকীয়ভাবে দেওয়া। কিন্তু বিশদভাবে বা আসল ঘটনাই আর বলতে না পারা।
৫. আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলা, যা কখনো কখনো অন্যদের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
৬. অন্যের দ্বারা সহজে প্রভাবিত হওয়া, মানে কেউ একটু প্রশংসা করলেই তার ওপর নির্ভরশীল বোধ করা।
এই ব্যক্তিত্বের মানুষের সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে। সঙ্গী প্রশংসা না করলে বা একটু কম মনোযোগ দিলে মনোমালিন্য তৈরি হয় এবং সম্পর্ক নষ্ট হয়। আবার অন্য কেউ একটু পাত্তা দিলেই তাঁকে আপন মনে হতে শুরু করেন। অনেক সময় তাঁরা গভীর সম্পর্কেও চলে যান।
কাদের বেশি হয়
টিনএজের শেষের দিকে বা ২০–২১ বছরের মেয়েদের বেশি হয়।
কী কারণে হয়
এ ধরনের মানসিক সমস্যার অনেক কারণ থাকে। তবে বেশির ভাগই অজানা। তবে কিছু বিষয় এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে—
বংশগত: অনেক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এমন ব্যক্তিত্ব পারিবারিকভাবে আসে। বংশের কারও থাকলে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ছোটবেলায় যৌন নিগ্রহের শিকার হলে বা বড় কোনো আঘাত পেলে: অনেক সময় দেখা যায়, ছোটবেলায় মা–বাবা মারা গেলে বা অন্য কোনো কারণে বাচ্চাদের প্রতি পরিবারের মনোযোগ কমে যায়। আর সেই মনোযোগ পাওয়ার আশায় অনেকে কিছু করে বসেন।
প্যারেন্টিং স্টাইল: অনেক অভিভাবক বাচ্চাদের বেশি প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেন বা কোনো কিছুতেই শাসন করেন না। ফলে তাদের ব্যক্তিত্ব গঠনে এর প্রভাব পড়ে।
কীভাবে রোগনির্ণয় সম্ভব
হিস্ট্রিয়নিক পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার রোগীরা কখনো নিজের সমস্যা বুঝতে পারেন না। ফলে তাঁরা কখনোই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। কিন্তু হিস্ট্রিয়নিক পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারের সঙ্গে যখন হতাশা, অবসাদ, বারবার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি যোগ হয়, তখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বিস্তারিত জানতে গিয়ে দেখতে পান, রোগীর হিস্ট্রিয়নিক পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার আছে।
চিকিৎসা কী
কিছু সাইকোথেরাপি এই রোগ থেকে প্রশমন করতে পারে। যেমন গ্রুপ থেরাপি, সাইকোডায়নামিক ও সাপোর্টিভ থেরাপি, কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি ইত্যাদি।
লেখক: ডা. আফলাতুন আকতার জাহান, মেডিসিন স্পেশালিস্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা