অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় যে ৫টি ক্ষতি হয়
হয়তো আগামীকাল আপনার পরীক্ষা কিংবা অফিসের প্রেজেন্টেশন, এই চিন্তায় রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে গেল। অনেকেই আছেন, যাঁরা সামান্য বিষয় নিয়েও দুশ্চিন্তা করেন। যা হওয়ার নয়, সেটাও ভেবে বসে থাকেন নিজের মধ্যে। এই বদভ্যাস কিন্তু মন ও শরীরের জন্য বয়ে আনে ভীষণ ক্ষতি। এই সমস্যা কারও কারও মধ্যে কিশোর বয়স থেকেই। বয়ঃসন্ধিকালে পরিবেশ কিংবা পারিবারিক রীতিনীতির প্রভাব থাকে এতে। সমস্যাটা দানা বাঁধুক যেভাবেই, এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে নিজেকেই। কেননা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার আছে নানা বিপত্তি। জেনে রাখুন এর থেকে বেরিয়ে আসার উপায়...
১. আত্মবিশ্বাস কমিয়ে ফেলে
শুরুতেই যদি ধরে নেন আপনাকে দিয়ে হবে না, তাহলে পুরো বিষয়টি আপনার জন্য নেতিবাচক হয়ে দাঁড়াবে। এতে আপনার পুরো কর্মপরিকল্পনাই হতে পারে বরবাদ। তাই কী হবে না হবে, সবকিছু ঝেড়ে ফেলে কাজটা সঠিকভাবে করুন।
২. শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা
মানসিক বিপত্তি ছাড়াও দেখা দেয় শারীরিক সমস্যা। খিদে না লাগা থেকে শুরু করে ঘুম কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, বহুমূত্র এমনকি হৃদ্রোগও দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে। অনেকেরই ‘টেনশন হেডেক’ বা অতিরিক্ত মাথাব্যথা দেখা দেয়। ফলে ঘাড় ও চোখের ব্যথাও হতে পারে।
৩. মানসিক সমস্যা
খিটখিটে মেজাজ, হতাশা, উৎসাহ হারিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে অল্পতেই রেগে যাওয়া, সহজেই ভুলে যাওয়া কিংবা বিভিন্ন অসামাজিক আচরণ দেখা দেয়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে আগে যেসব বিষয় সহজেই গুছিয়ে নিতে পারতেন, সেটা আর কিছুতেই পারবেন না। উল্টা সবার সামনে সহজেই রেগে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। এটা কিন্তু আপনার পরিবার ও কর্মক্ষেত্র—দুই ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর।
৪. সঠিকভাবে কাজ করায় বাধা
যদি শুরুতেই ধরে নেন যে কাজটি আপনাকে দিয়ে হবে না, কিংবা আপনি পারবেন না, তাহলে সঠিকভাবে কাজ করার উদ্দীপনাই নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাঘাত ঘটে স্বাভাবিক জীবনযাপনে।
৫. অল্পতেই ভেঙে পড়া
বেঁচে থাকার জন্য নিত্যদিন সংগ্রাম করতে হয়। আর আপনি যদি কোনো কিছুতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে সাহসের সঙ্গে বেঁচে থাকার প্রবণতাই নষ্ট হয়ে যাবে, যা আপনার ব্যক্তিত্বের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী
খুব সহজ উপায় হলো, কিছু ক্ষেত্রে লাগাম ছেড়ে দেওয়া। এর মানে হলো, আপনাকে ভালো করতে হবে, এমন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা। আপনি চেষ্টা করুন চলার পথে বিভিন্ন বিষয় শেখার। সে অনুযায়ী কাজ করুন। ভালো ও মন্দ নিয়েই আমাদের জীবন।
পারিবারিকভাবে অনেকেই সমস্যাটি পেয়ে থাকেন। তাই নিজের সমস্যাকে চিহ্নিত করে নিন আগে। বুঝতে শিখুন, আপনার পরিবারের সদস্যটির এই আচরণ সঠিক নয়। নিজের জীবনে এই বিষয়গুলোই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। সবকিছু হালকাভাবে নিতে শিখুন।
কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখুন নিজের জন্য। প্রয়োজনে শখের কাজগুলো করুন। অনেক দিন ছবি আঁকেন না? এখনই আবার শুরু করুন। অবসরে প্রিয় মানুষ, পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটান। দেখবেন আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে ধীরে ধীরে।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার অন্যতম একটি সমস্যা হলো, কোনো ব্যক্তির ওপর সব রাগ বা দোষারোপ করা। এতে কিন্তু দূরত্বের সৃষ্টি হবে। তাই এ ধরনের আচরণ থেকে বেরিয়ে আসুন। অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেকেই কিছুটা সময় দিন। নিজের সমস্যা চিহ্নিত করুন, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আপনাকেই।
আবেগের নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত আবেগ ক্ষতির কারণ। আর কথায় কথায় রেগে যাওয়া আপনার ব্যক্তিত্বের জন্যই নেতিবাচক। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতেই হোক, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন। প্রয়োজনে কিছুটা সময় নিয়ে ব্যাপারটি নিয়ে ভাবুন।
নিয়মিত শরীরচর্চা
যোগ ব্যায়াম কিংবা সকাল-সন্ধ্যায় হাঁটতে বেরোলে দেখবেন নিজেরই ভালো লাগছে। এ ধরনের শারীরিক পরিশ্রমের ফলে আপনার ভেতরের উদ্বেগ কমবে। অনেকটা নির্ভার বোধ করবেন।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট